Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ঢাকা / বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নাই - হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্র...

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নাই - হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

March 21, 2025 10:09:21 PM   অনলাইন ডেস্ক
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নাই - হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

ওবায়দুল হক বাদল:
রাজধানীতে হেযবুত তওহীদের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ২০ রমজান শুক্রবার (২১ মার্চ) ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) তে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগর শাখা। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইফতারপূর্ব আলোচনা সভা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। বিশেষ করে  ফিলিস্তিনিদের উপর দখলদার ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও নির্যাতনের বিষয়ে তুলে ধরে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। এছাড়াও বক্তব্যে সওমের উদ্দেশ্য, শিক্ষা এবং দেশ ও সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বিদ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি, মুসলমানদের দুর্দশা এবং এ থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা করেন। বিশ্বজুড়ে মানব সমাজে অশান্তি, অবরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি, যুদ্ধ, রক্তপাত, বিদেশিদের আগ্রাসন বন্ধে মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Iftar 1
অপরদিকে বাংলাদেশে চলমান অন্যায়, নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন সহ নানা রকমের অপরাধ বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেন হেযবুত তওহীদের এমাম। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের উপর নির্যাতন, অপরাধ বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সমস্যার জন্য বর্তমান সিস্টেম বা জীবনব্যবস্থাকে দায়ী করেন হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, “রাজনীতির নামে যা কিছু চর্চা করছি, তা একটি ভুল সিস্টেম, ভুল ব্যবস্থা। আল্লাহ আমাদেরকে এই রাজনীতি করার নির্দেশ দেননি, আল্লাহর রসুলও আমাদের এটি শেখাননি। পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের উপর এটি চাপিয়ে দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমাদের শেখানো এই অপরাজনীতি ও ধাপ্পাবাজির মাধ্যমে আমাদের সমাজে সরল মানুষ ধূর্ত হয়ে যাচ্ছে, ভদ্র ঘরের ছেলেরা সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখাচ্ছে, কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে। শিক্ষিতরা দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠছে, এবং যারা ভালো থাকতে চায়, তারা খারাপের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে।” হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম উল্লেখ করেন যে, শুধু রাজনীতি নয়, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো এখনও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, “এ কারণে কাঠামোগত সংস্কার করলেই লাভ হবে না, এই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।”

সওমের উদ্দেশ্য ও শিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সওম শব্দের অর্থ আত্মসংযম, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, বিরত থাকা। রোযা তথা সওমের উদ্দেশ্য এই যে, মোমেন ব্যক্তি সারাদিন পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন, নিজের আত্মাকে শক্তিশালী করবেন। তিনি অপচয় করবেন না, পশুর ন্যায় উদরপূর্তি করবেন না। তিনি হবেন নিয়ন্ত্রিত, আত্মত্যাগী। বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত, দরিদ্র মানুষের দুঃখ অনুভব করে তিনি তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেবেন। আল্লাহর হুকুম মানার ক্ষেত্রে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবেন অর্থাৎ তিনি হবেন তাকওয়াবান। তার এই চরিত্রের প্রতিফলন ঘটবে সামাজিক ও জাতীয় জীবনে। গড়ে উঠবে এমন এক সমাজ যেখানে সবাই একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে উৎসাহী হবে, বিরাজ করবে পরস্পর সহমর্মিতা, সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ব। প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি। কিন্তু আজকের বাস্তবতা এই যে, বর্তমানে এই মৌলিক শিক্ষা হারিয়ে সওম বা রোযা যেন হয়ে গেছে কেবল না খেয়ে থাকার নামান্তর। দেখা যায়, রমজান আসলেই মুসলিমদের মধ্যে হুলুস্থুল পড়ে যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে ওঠে আকাশছোঁয়া। সংযমের মাস এলেই মুসলিমদের সংযমের সব বাঁধ যেন ভেঙে যায়। আজ সওমকে ব্যবসায়ের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। এ জাতীয় ধর্মব্যবসা ঢাকার জন্য আত্মপ্রচারের আশায় কিছু দান-খয়রাত করতে দেখা যায় মাত্র। সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের বোধ অর্থাৎ তাকওয়া সৃষ্টি করতে ব্যর্থ আজ। প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ যেখানে কোরআনে বলেছেন, তাকওয়া সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই তিনি সওমকে ফরজ করেছেন সেখানে এই উদ্দেশ্যই যখন বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তখন আল্লাহর কাছে আমাদের সারাদিন না খেয়ে থাকার মূল্য কতটুকু? আল্লাহর রসুল (স.) বলেছেন, “এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ সওম রাখবে কিন্তু সেটা হবে কেবল না খেয়ে থাকা (অর্থাৎ সওমের উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না)।” রসুলের (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে। মানুষের নফস ভোগবাদী, সে চায় দুনিয়ার সম্পদ ও ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করতে। পক্ষান্তরে সওমের শিক্ষা হচ্ছে ত্যাগ করা, সংযত থাকা, নিজের ভোগবাদী প্রবণতার মুখে লাগাম দেওয়া। মানবতার কল্যাণে কাজ করা, সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা হচ্ছে ত্যাগের বিষয়, যা ভোগের ঠিক উল্টো। এটা করতে নিজেদের জান ও মালকে উৎসর্গ করতে হয়। ত্যাগ করার জন্য চারিত্রিক শক্তি, মানসিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে। যেসব বৈশিষ্ট্য গুণাবলী সওম পালনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়।”

Iftar 2
তিনি বলেন, আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে- আজকে পৃথিবীময় ১৬০ কোটি মুসলিম। তাদের হাতে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ। তাদের নামাজ-রোজা ইত্যাদি আমলে কোনো ঘাটতি নেই। অথচ মুসলিম জাতি গত কয়েকশ বছর ধরে লাঞ্ছনাময় জীবনযাপন করছে। যাদের দায়িত্ব ছিল সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা তারা এখন সবচেয়ে বেশি অশান্তিতে নিপতিত। এই দুর্দশা ঘোচাতে হলে আজকের মুসলিম জাতিকে সর্বপ্রথম তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম তথা ন্যায়-সত্য আর হকের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যায়, অবিচার, মিথ্যা, দালালাতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জেহাদ অর্থাৎ আপ্রাণ প্রচেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ প্রকৃত মোমেন হতে হবে। রাজনৈতিক দল, ফেরকা, মাজহাব ইত্যাদি যাবতীয় অনৈক্য ঘুচিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়াময় শান্তি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর হেযবুত তওহীদ সেই ঐক্যের ডাকই দিয়ে যাচ্ছে।

হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, তথ্য সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, কেন্দ্রীয় যুগ্ম নারী বিষয়ক সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সভাপতি আল আমিন সবুজ, মিরপুর থানা সভাপতি আব্দুল হক বাবুল প্রমুখ। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নিয়মিত শিল্পীরা গজল পরিবেশন করেন।