
বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা:
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে কৃষি অফিসের মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের অবহেলা আর সঠিক নজরদারী না থাকার কারণে মাঠে পুরছে কৃষকের স্বপ্ন, কৃষিতে কাজে আসছে না সরকারের কোন বরাদ্দ। অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের শেলবরিষা ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফেরদৌসের বিরুদ্ধে। তিনি সময়মত মাঠ পরিদর্শন না করার কারনে ধানে খরা বা কারেন্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১০ একর জমির ধান পুরে ক্ষতি হয়েছে। সরকার কৃষককে পরামর্শ ও প্রদর্শনী বাবদ অর্থ বরাদ্দ দিলেও তার কোন উপকার পান না এ অঞ্চলের কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের জোকনালা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম কৃষি অফিস থেকে সহসয়তা হিসেবে ২০ কেজি ব্রিধান-৮৭ বীজ পেয়ে রোপন করেন এক বিঘা জমিতে। রোপনের প্রথম অবস্থায় ধানের ফলন ভালো মনে হলেও সঠিক পরামর্শের অভাবে সেই ধান আর ফলাতে পারলেন না তিনি। ধান পাকার আগ মুহুর্তে জমিতে কারেন্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে ধান। এলাকার অনেক জমিতে এই কারেন্ট রোগ দেখা যায়।
ব্লকে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ধানের অজানা রোগের প্রতিকারে পরামর্শ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে জমির মালিক কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, ধান রোপনের সময় ব্লকে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফেরদৌস একবার এসে ক্ষেতে পোকা লাগলে কি করনীয় কি ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে সেই পরামর্শ দিয়েছিলেন, এর পর জমিতে আর আসেননি, প্রায় দুইমাস পর আজ রবিবার সকালে এসে প্রদর্শনী সাইন বোর্ড সরিয়ে নিতে বলে এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে অজানা রোগে নষ্ট হওয়া ধান কাটতে বলেন। কেন দ্রুত ধান কেটে নিতে বলেন জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন কে বা কারা সাংবাদিকদের খবর দিয়েছে সেই জন্য দ্রুত ধান কেটে সরিয়ে নিতে বলেছেন।
জোকনালা গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ মাস্টার বলেন, আমার জমিতে ব্রি ৪৯ ধানে কারেন্ট নামে পোকা ধরার প্রতিকারের জন্য কৃষি অফিসে ব্লকের দায়িত্বে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি এমন কি ব্লকেও কখনও তাকে দেখা যায়নি।
জোকনালা গ্রামের কৃষক ময়নাল বলেন, একবার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফেরদৌসের সাথে মাঠে দেখা হয়েছিল, আমরা ছোট কৃষক ৫/৭ বিঘা জমি আবাদ করি, কিছু পরামর্শের জন্য গিয়েছিলাম তিনি আমার কথার গুরুত্বই দিলেন না।
এসময় ইউপি সদস্য নুর নবী বলেন, কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য যে সব কৃষি অফিসাদের দায়িত্ব দেওয়া আছে তারা যদি অফিসে বসে না থেকে সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শন করে কৃষককে পরামর্শ দিতেন তাহলে আজ এত বড় ক্ষতি হতো না, কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ এবং কৃষক।
এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফেরদৌস হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আসলে ঠিক না। আমি সপ্তাহে তিন দিন এই অঞ্চলে গিয়ে মাঠ পরিদর্শন করে থাকি ও কৃষককে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আর এখানে এই জমি গুলোতে বজ্রপাত হয়ে ধান পুরে গেছে। এটা কোন রোগে পড়েনি। আমরা সব সময় কৃষকের পাশে থাকি এবং কাজ করি।
বেলকুচি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্যাণ প্রসাদ পাল বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে ঐ জমিতে বজ্রপাত হয়েছিলো তাই কৃষকের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরো জমিতে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আর আমার অফিসের উপ- দসহকারী যদি সময় মতো কৃষককে পরামর্শ না দিয়ে থাকে তাহলে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানাবো। আর এ ধরনের ক্ষতিতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ক্ষতি পুরনের ব্যবস্থা নেই। আমি আসামিকাল নিজে গিয়ে দেখে আসবো।