Date: October 25, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / আন্তর্জাতিক / ভারতে এখন এআই-এর মাধ্যমে ভগবানের সঙ্গে চ্যাট সম্ভব - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

ভারতে এখন এআই-এর মাধ্যমে ভগবানের সঙ্গে চ্যাট সম্ভব

October 22, 2025 05:52:49 PM   অনলাইন ডেস্ক
ভারতে এখন এআই-এর মাধ্যমে ভগবানের সঙ্গে চ্যাট সম্ভব

ভারতে এখন প্রযুক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে তৈরি হয়েছে এক নতুন যোগসূত্র। ধর্মপ্রাণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, ক্রমেই ঝুঁকছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবটের দিকে—ঈশ্বরের পরামর্শ বা আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা পাওয়ার আশায়। পুরোহিত বা গুরুদের জায়গা নিচ্ছে এক নতুন “ডিজিটাল গুরু” — রোবট ও চ্যাটবট।

রাজস্থানের ২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী বিজয় মিল তারই একটি উদাহরণ। জীবনের কঠিন সময় তিনি ভরসা রাখেন ‘গীতাজিপিটি’ নামের এক এআই অ্যাপের ওপর। ভগবদগীতার ৭০০টি শ্লোক ব্যবহার করে তৈরি এই অ্যাপটি ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথোপকথন করে ঠিক বন্ধুর মতো। তবে কথার মাঝেই মনে করিয়ে দেয়, “আপনি ভগবানের সঙ্গে কথা বলছেন।” ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর হতাশ বিজয় এই বটে নিজের মনোবেদনা প্রকাশ করেছিলেন। উত্তরে বট বলেছিল—“ফলের চিন্তা ত্যাগ করে কাজের ওপর মনোযোগ দাও।” এই এক বাক্যই তাকে নতুন অনুপ্রেরণা দেয়, এবং তিনি আবার প্রস্তুতি শুরু করেন।

বিশ্বজুড়ে এআই এখন শুধু কাজ বা শেখার ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের মানসিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে প্রবেশ করছে। হিন্দু ধর্মে দেবতার দৃশ্যমান উপস্থাপনার ঐতিহ্য থাকার কারণে প্রযুক্তিকে ঈশ্বরের উপস্থিতির নতুন মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলেসলি কলেজের নৃবিজ্ঞানী হলি ওয়াল্টার্স বলেন, “অনেকেই আজ সমাজ, উপাসনালয় বা ধর্মীয় গুরুর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করছেন। ফলে এআই-এর সঙ্গে ঈশ্বরের কথা বলা তাদের কাছে কেবল আধ্যাত্মিকতা নয়, এটি একধরনের আত্মিক সম্পর্ক।”

ভারতে বর্তমানে ধর্মীয় এআই ব্যবহারের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নানা সংস্করণের ‘গীতাজিপিটি’, মুসলমানদের জন্য ‘কোরআনজিপিটি’, আর খ্রিস্টানদের জন্য ‘টেক্সট উইথ জেসাস’। রাজস্থানের ছাত্র বিকাশ সাহু তৈরি করেছেন জনপ্রিয় ‘গীতাজিপিটি’, যা কয়েক দিনের মধ্যেই এক লাখ ব্যবহারকারী পায়। এমনকি ইশা ফাউন্ডেশনও তাদের মেডিটেশন অ্যাপে এআই সংযোজন করেছে।

২০২৫ সালের মহা কুম্ভ মেলাতেও প্রযুক্তির এই ছোঁয়া দেখা গেছে। ‘Kumbh Sah’AI’yak’ নামের চ্যাটবট দর্শনার্থীদের ভ্রমণ ও থাকার তথ্য দিয়েছে, আর ‘ডিজিটাল দর্শন’ সুবিধার মাধ্যমে মানুষ দূর থেকেও ত্রিবেণী সঙ্গমে ভার্চুয়াল স্নানের অভিজ্ঞতা নিতে পেরেছে। কিছু মন্দিরে রোবটিক হাতি ও দেবতাও ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন কেরালার ইরিঞ্জাডাপিলি রমন।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ধর্মীয় এআই-এরও সীমাবদ্ধতা আছে। মাঝে মাঝে এসব বট ভুল ধর্মীয় তথ্য দিতে পারে বা অনুপযুক্ত মন্তব্য করতে পারে, যাকে বলা হয় ‘এআই হ্যালুসিনেশন’। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতাত্ত্বিক রেভারেন্ড লিন্ডন ড্রেক বলেন, “চ্যাটবটগুলো অনেক সময় তাদের নির্মাতাদের পক্ষপাত প্রতিফলিত করে, বিশেষ করে যেখানে প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা কম।”

তবু বিজয় মিলের মতো অনেক ব্যবহারকারীর কাছে এই চ্যাটবটগুলো আধুনিক জীবনের চাপের মাঝে একপ্রকার মানসিক আশ্রয়। মন্দিরে না গিয়েও তারা পেয়ে যাচ্ছেন শাস্ত্রনির্ভর উপদেশ, আত্মসমালোচনার সুযোগ এবং ঈশ্বরের সঙ্গে এক নতুন, প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগ। বলা যায়, ভারতে এখন প্রযুক্তি শুধু মানুষের জীবন নয়—তার আধ্যাত্মিক জগতকেও স্পর্শ করছে, তৈরি করছে নতুন এক “ডিজিটাল ধর্মীয় অভিজ্ঞতা।