
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে তাকওয়া পরিবহনের স্টাফদের বিরুদ্ধে অটোরিকশা চালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পায়ের রগ কেটে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। হত্যার পর মরদেহ মহাসড়কে ফেলে দেয়ার ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন অটোরিকশা চালক ও স্থানীয়রা।
স্বজনদের অভিযোগ, তাকওয়া পরিবহনের চালকরা হত্যার পর মরদেহ ফেলে রেখে চলে যায়। নিহতের পরিবার অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের মামলা নিতে গড়িমসি করছে। তাকওয়া পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে প্রায় চার ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে হাজার হাজার অটোচালক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে হত্যার মামলার রজু এবং তাকওয়া পরিবহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে মহাসড়ক অবরোধ মুক্ত হয়।
নিহত অটোরিকশা চালক মো. লিটন মিয়া (৩০) নেত্রকোনা জেলার মদন থানার সিবপাশা গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাধখলা গ্রামের ভাড়া থেকে অটোরিকশা চালাতেন।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল পৌনে ৮টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া নতুন এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল স্থানীয়রা। এ ঘটনার আগের দিন, সোমবার বিকালে, গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি বাজারে ওই অটো চালকের সাথে পরিবহনের স্টাফদের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে স্টাফরা তাকে জোরপূর্বক তাকওয়া পরিবহনে উঠিয়ে নিয়ে যায়। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে তাকে পায়ের রগ কাটা ও শরীরে আঘাতের চিহ্নসহ রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় তারা।
নিহতের স্ত্রী শরমিন বেগম বলেন, "গতকাল বিকালে গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি এলাকায় তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসের স্টাফের সঙ্গে আমার স্বামীর বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। এরপর স্বামীকে তারা জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর দেখলাম তার মরদেহ পড়ে আছে, তার হাত-পায়ের রগ কাটা ছিল এবং তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় ছিলেন।"
নিহতের ছোটভাই মো. আজিজুল অভিযোগ করেন, "ভাইকে তুলে নিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করছে। আমরা রাতভর থানায় অবস্থান করেছি, কিন্তু তারা মামলা নেয়নি। আমাদের ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে, অথচ তারা সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলছেন। এজন্য স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করেছে।"
অটোরিকশা চালক সুমন বলেন, "তাকওয়া পরিবহনের বাসের স্টাফরা যা ইচ্ছে তা করতে পারে। একজনকে খুন করা তাদের জন্য কিছুই না। তারা বাসে নারীদের ধর্ষণ করতে পারে, শিশুদের ধর্ষণ করতে পারে। অথচ একজন চালককে তুলে নিয়ে খুন করা হয়েছে, আর পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।"
মাওনা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আইয়ুব আলী জানান, "আমরা মহাসড়কে লাশ পেয়েছি, তবে দুর্ঘটনার মামলা ছাড়া হত্যা মামলা নেয়া আমাদের এখতিয়ার নয়।"
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, "আমরা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা গ্রহণ করছি। দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে, তবে তাকওয়া পরিবহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"