
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে সালিশ বৈঠকে সংঘর্ষে দুইবছর বয়সী এক শিশু খুনের ঘটনায়, জরিত থাকার অভিযোগে শিশুর বাবা ও চাচাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। জমি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রতিপক্ষের আঘাতে শিশু মৃত্যর ঘটনায় প্রকাশ পেলেও ওইদিন রাতে ওই শিশুর চাচা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তারই বড় ভাইয়ের স্ত্রীর উপড় হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে।
পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্যে বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে পিটানোর সময় ওই নারীর কোলে থাকা ২ বছরের শিশুর মৃত্যু হয়। পুলিশ অভিযুক্ত বাবা ও চাচাকে গ্রেপ্তার করে। শিশু হত্যার অভিযোগ এনে স্বামী দেবরসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন শিশুর মা কুলসুম আক্তার।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর)দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত বাবা এবং চাচাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে শ্রীপুর থানা পুলিশ।নিহত শিশু ফাতেহা খাতুন (২) উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের কন্যা।
গ্রেপ্তারকৃত শিশুর বাবা আব্দুস সাত্তার (৩৭) উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামের মো. লিয়াকত আলী শেখের ছেলে। বাবা আব্দুস সাত্তার পেশায় একজন মাছ বিক্রেতা। চাচা মোক্তার হোসেন শেখ (৩২)। তিনি অটোরিকশা চালক। মামলার অন্য আসামী হলেন, একই গ্রামের মো. আব্দুর রশিদ শেখের ছেলে ফরহাদ শেখ (২৮)।
থানায় দায়ের করা শিশুর মা কুলসুম বেগমের এজাহার সূত্রে জানাযায়, দীর্ঘদিন যাবৎ তার শ্বশুর লিয়াকত আলী শেখ ও চাচা শ্বশুর লাল মিয়া গংদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। এনিয়ে বেশ কয়েকবারে সালিশ বৈঠক হয়েছে। তাতেও সমস্যা সমাধান হয়নি। সমস্যা সমাধান করতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে সালিশ বৈঠক বসে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের একপর্যায়ে মাতব্বর ফালুন মৃধা নামে এক ব্যক্তি তার দেবর মোক্তারের গায়ে হাত তুলে। এতে করে উভয় পক্ষের মধ্যে হট্টগোল বাধে। হট্টগোলের শব্দ শুনে সে বাহিরে আসি। এসময় তার শিশুকন্যা তার কোলে ছিলো তখন সে রান্না ঘরে রান্না করছি। রান্নাঘর থেকে বাড়িরে উঠানের সামনে এলে অভিযুক্ত প্রতিপক্ষ ফরহাদ শেখ একটি কাঠের বাটাম দিয়ে তাকে সজোরে আঘাত করে। এরপর এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এসময় তার স্বামী তার ভাই মোক্তার হোসেন শেখকে হুকুম দেয় তাকে জীবনে মেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হবে। এরপরই দেবর মোক্তার হোসেন শেখ কাঠের বাটাম দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। একপর্যায়ে তার চুলের মোঠো ধরে হেঁটে তার শিশুকন্যার মাথায় আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে শিশুকন্যা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয়রা উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার শিশুকন্যাকে মৃত ঘোষণা করে।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এ এফ এম নাসিম জানান, ঘটনার পরপরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার রাতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ভিডিও দেখে শিশুর বাবা ও চাচাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং শুক্রবার সকালে আসামীদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জরিত বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার বেলা এগারোটার দিকে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামে জমি বিরোধ মিটাতে সালিশ বৈঠকে সংঘর্ষের ঘটনায় চাচার নির্মম আঘাতে খুন হন দুইবছর বয়সী শিশু ফাতেহা।