
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার পুটিয়া সোনালী ব্যাংক শাখার পার্ট-টাইম সুইপার মোবারকের নামে থাকা দুই কোটি টাকার শেয়ার (সঞ্চয়পত্র) উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়।
জানা গেছে, মোবারক ২০০৫ সালে দৈনিক হাজিরায় মাস্টার রোলে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে পুটিয়া শাখায় কর্মরত হন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক রিয়াজুল হক ভূঁইয়াকে ম্যানেজ করে লোন প্রদান, চেক বই ইস্যুসহ ব্যাংকের প্রায় সব কর্মকাণ্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এমনকি গ্রাহকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধাও আদায় করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে স্থানীয় চায়ের দোকানে বসে কেউ কেউ রসিকতা করে তাকে “ম্যানেজার” বলেও ডাকতো। তার দাপটে ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তারাও আতঙ্কে থাকতেন।
২০২২ সালে মোবারক শিবপুর উপজেলার সুরুজ মেম্বারের কাছ থেকে ২০ শতাংশ, পূর্ব সৈয়দ নগর বিলপার হানিফার কাছ থেকে ১৫ শতাংশ এবং মজিবুরের কাছ থেকে ৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। পাশাপাশি তার স্ত্রী হাবিবা এবং সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সামীর ব্যাংক হিসাবেও কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য উঠে আসে। এসব বিষয় সোনালী ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স টিমের নজরে এলে তারা তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে এসব অনিয়মের প্রমাণ মেলে। এরপর মোবারকের স্ত্রীর নামে থাকা দুই কোটি টাকার সঞ্চয়পত্রের উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেয় ব্যাংকের হেড অফিস। পাশাপাশি ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মোবারকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। তবে তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় এবং ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মেলায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, অডিট টিমের তদন্তের সময় মোবারক ৪ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে পরিস্থিতি ম্যানেজ করারও চেষ্টা করেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংক পুটিয়া শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, “সঞ্চয়পত্র উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে।”
মোবারকের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে, সোনালী ব্যাংক পুটিয়া শাখার গ্রাহকদের কাছ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া এবং মোবারককে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।