ঢাকার সাভারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (DIU) এবং সিটি ইউনিভার্সিটির (CU) শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ভয়াবহ সংঘাতের জেরে রাতভর উত্তেজনা বিরাজ করেছে। রোববার রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৪টা পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যার প্রধান কেন্দ্র ছিল সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। সাভার মডেল থানার বিরুলিয়া ফাঁড়ির এসআই আব্দুল ওহাব জানিয়েছেন, বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান এলাকায় এই সংঘর্ষ শুরু হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে তা চলতে থাকে।
ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ভাষ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের দাবি, ঘটনার সূচনা হয় রোববার সন্ধ্যায় 'ব্যাচেলর প্যারাডাইস' নামের একটি ভবনের সামনে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামান্য কথা-কাটাকাটি থেকে। এরপর রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের একটি মেসে হামলা ও ভাঙচুর চালালে সংঘাতের সূচনা হয়।
অন্যদিকে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের এক শিক্ষার্থীর থুতু ভবনের ওপর থেকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর গায়ে পড়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তাদের ভাষ্যমতে, প্রথমে মীমাংসার চেষ্টা হলেও ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পরে সংগঠিতভাবে তাদের ক্যাম্পাসে আক্রমণ করে।
সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীরা ‘পরিকল্পিত ভাবে’ সীমানা প্রাচীর ভেঙে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তারা প্রশাসনিক ভবন, ক্যান্টিন ও হলে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এই ভয়াবহ হামলায় তিনটি বাস, একটি প্রাইভেটকার ও দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং আরও বেশ কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়। সংঘর্ষের সময় লাঠির আঘাতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলেও সিটি শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন।
রাত সাড়ে ৪টায় সিটি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আকতার হোসেন বলেন, "সব শেষ করে ফেলেছে। ড্যাফোডিলের কিছু শিক্ষার্থী আমাদের ক্যাম্পাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। বেশ কিছু গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।"
পুলিশের ভূমিকা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে এসআই আব্দুল ওহাব জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মীমাংসা চলাকালীন সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীকে মারধর করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপরেই ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।
সংঘর্ষে আহতদের দাবির বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল ওহাব নিশ্চিত করতে পারেননি, তবে তিনি জানান বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও বিরুলিয়া এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এই সংঘাতের বিষয়ে সিটি ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।