মেট্রো লাইনের বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ে পথচারীর মৃত্যুর ঘটনার পর আগারগাঁও থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর হাজারো মানুষ। দুর্ঘটনাটির জেরে রোববার দুপুর সোয়া ১২টার পর উত্তরা-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দুপুর ৩টা থেকে উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ৭টার পর মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে মেরামত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) আগারগাঁও থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার সকালে আগারগাঁও স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তরা থেকে আসা ট্রেনগুলো যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগারগাঁও স্টেশনের নিচে বহু মানুষকে বিকল্প যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকে যাত্রীরা শাহবাগ বা সরাসরি মতিঝিল পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন যানবাহনে উঠছেন।
সকালে আগারগাঁও ক্রসিংয়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়। যাত্রীতে ভর্তি স্বাধীন পরিবহনের একটি বাস মিরপুরের দিক থেকে আগারগাঁও আসামাত্রই বহু মানুষ বাসের দরজায় ভিড় করেন। তবে বাসের সহকারী হাত নেড়ে জানান দিচ্ছিলেন ভেতরে আর কোনো জায়গা নেই। এমন পরিস্থিতিতে এক নারী সহকারীকে অনুরোধ করতে থাকেন তাকে উঠানোর জন্য, কারণ অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ব্যাংক কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, “উত্তরা থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেলে এসেছি। আর আগারগাঁও থেকে অফিসের শাটল বাস সার্ভিসে উঠবো। কিন্তু প্রায় ৩০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি, যানজটের কারণে বাস আগারগাঁওয়ে আসতেই পারছে না।” যানবাহন না পেয়ে অনেকে আগারগাঁও থেকে বিজয় সরণী পর্যন্ত হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন।
আগারগাঁও থেকে বিজয় সরণি হয়ে খামারবাড়ি পর্যন্ত সড়কেও যানজট দেখা গেছে। খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেইট পর্যন্ত বাম পাশের লেনটি বন্ধ করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ পিলারের উপর বেয়ারিং প্যাড মেরামতের কাজ করছে। ফুটপাত দিয়ে লোক চলাচল করলেও বন্ধ করে রাখা হয়েছে যান চলাচল। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সামনের ফুটপাতে যেখানে রোববার বেয়িরিং প্যাডটি পড়েছিল, সেই জায়গার ভাসমান দোকানপাটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মেট্রো লাইনের বিয়ারিং প্যাড পড়ে আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তির প্রাণহানির ঘটনায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি নিহতের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নিহত আবুল কালাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি এলাকার জলিল চোকদারের ছেলে এবং পরিবারে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল। রোববার গঠিত কমিটি সেই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কম্পন প্রতিরোধের জন্য সেতু বা উড়াল সেতুতে ইলাস্টোমোরিক বিয়ারিং প্যাড বসানো হয়। এই প্যাড নিওপ্রেন বা প্রাকৃতিক রাবার দিয়ে তৈরি এবং এটি পিয়ার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো হয়। কিছু প্যাডের ভেতরে কয়েক পরতে স্টিলের কাঠামো থাকে এবং উপরে থাকে রাবার। এগুলো ওজনে অনেক ভারী হয়।