
জবি প্রতিনিধি:
প্রকাশিত হলো দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী সলিমুল্লাহ খানের প্রথম সাক্ষাৎকারগ্রন্থ "বাংলাদেশ: পঞ্চাশ বছর পর"। বইটির সার্বিক পরিকল্পনা ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দীন। প্রকাশনা সংস্থা মধুপোক বইটি প্রকাশ করেছে, এবং এটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আগামী প্রকাশনী (৯ নং প্যাভিলিয়ন) থেকে পরিবেশিত হচ্ছে।
বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত হওয়া সলিমুল্লাহ খানের এ বইটি "আত্মভাব গ্রন্থমালা"র প্রথম খণ্ড হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।
বইটি তিনটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ৫০ বছরের সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে। শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি নিয়ে বিশদ আলোচনা রয়েছে এতে। দ্বিতীয় পর্বে মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা ও বিভিন্ন ব্যক্তির ভূমিকার ভিন্নতর বিশ্লেষণ রয়েছে। আহমদ ছফা, তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করে।
বইটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. মিনহাজ উদ্দীন জানান, "বাংলাদেশ: পঞ্চাশ বছর পর" গ্রন্থের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের জন্য সলিমুল্লাহ খানের একটি বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যা পরবর্তীতে অনলাইনে প্রকাশিত হলে ব্যাপক পাঠকপ্রতিক্রিয়া পায়। এতে শেখ হাসিনার শাসনকাল ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে তাঁর তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।
একটি প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, "স্বাধীনতার জন্য যাকে বলা হয় সশস্ত্র সংগ্রাম, সেটার কোনো প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের ছিল না। তাঁরা ছিলেন পার্লামেন্টারি সংগ্রামের দল। সবচেয়ে বড় বিজয় ছিল নির্বাচনে জয়। কিন্তু পাকিস্তান যদি ক্ষমতা হস্তান্তর না করে, তবে কী করব? এর কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এখনো সে তর্ক চলছে দেশে।"
এরপর সলিমুল্লাহ খানের সাক্ষাৎকারভিত্তিক গ্রন্থ রচনার জন্য আরও দুই দফা সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যার শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। এতে জুলাই অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, "বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এখনো লেখা হয়নি। ইংরেজিতে একটা কথা আছে—‘All history is contemporary history।’ ইতিহাস মাত্রই সমসাময়িক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে লিখতে হয়, অথচ আমাদের লোকেরা সেই সাক্ষ্যটাই নষ্ট করে ফেলছে।"
বইটিতে ইতিহাস, রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ের অনন্য বিশ্লেষণ উঠে এসেছে সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্যে।