
নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালী হাতিয়ায় হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বসত ঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।গত শনিবার (২৯ মার্চ) রাত ৯টার দিকে এই হামলা চালানো হয়। এ সময় নারী ও শিশুসহ ১১ জন আহত হয়, নগদ দুই লাখ টাকাসহ মালামাল লুটপাট করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বয়ারচর এলাকার হরনি ইউনিয়নের উত্তর আদর্শ গ্রামের বাবুল উদ্দিন সহ কয়েকটি পরিবার হেযবুত তওহীদ নামক অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলনের সদস্য। বাবুল উদ্দিনের মেয়ের জামাই রহমত উল্লাহ ওই সংগঠনের হাতিয়া উপজেলার দায়িত্বশীল। ঘটনার দিন শ্বশুর বাড়িতে ইফতারের দাওয়াতে যান রহমত উল্লাহ। রাত নয়টার দিকে ওই বাড়ি সহ আশপাশের আরো তিনটি বাড়িতে ৩০-৪০ জনের একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালায় ও লুটপাট করে। এতে ওই বাড়ির অনেকে আহত হয়।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, হামলার নেতৃত্ব দেয় আলী বাজারের ইউসুফ হাজী। হামলায় মূল ভূমিকা রাখেন উত্তর আদর্শ গ্রামের রিয়াদ, রোমান, রায়হান, আলীম, মেরাজ, আলাউদ্দিন, ডাক্তার সুমন, হাসান, ওছা মিয়া, এনাম, বাচ্চু এবং আজিম নগরের মেহরাজ। তারা দেশীয় অস্ত্র ও লোহার রডসহ হামলা চালায়। এ সময় ১০ মাস বয়সী এক শিশু ও আট নারীসহ মোট ১১ জনকে মারধর করা হয় এবং নারীদের শ্লীলতাহানি করা হয়। এ সময় ফাতেমা নামের এক মহিলাকে মারধর করে নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়। বছরখানি আগেও এই এলাকার হেযবুত তওহীদ সদস্যদের ওপরে একই গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় ও লুটপাট করে। এর আগে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে হাতিয়া উপজেলায় বসবাসরত হেযবুত তওহীদ সদস্যদের ওপরে একই কায়দায় হামলা চালানো হয়।
মাইজদী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আহত অবস্থায় সাতজন ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে বাবুল উদ্দিনের অবস্থা গুরুতর। চোখ ও কপালে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। চোখের কোটরের পাশে চারটি সেলাই লেগেছে।
বাবুল উদ্দিন জানান, গত ১২ রমজানে সমিতি থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বিদেশে ছেলেকে পাঠানোর জন্য। হামলাকারীরা সেই টাকা লুটে নিয়ে গেছে। সেই সাথে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে তার দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে।
হামলায় আহত নারী ফাতেমা আক্তার জানান, উত্তর আদর্শ গ্রামের মসজিদের ইমাম এই হামলায় যুক্ত ছিলেন। তিনি যুবকদের মারধর করতে ইন্ধন দিচ্ছিলেন। তাকে সহ ওই বাড়ির অন্যান্য মহিলাদের ওপরেও হামলা চালানো হয়। তাদেরকে চুল ধরে টেনে বাড়ির বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। মারধরের এক পর্যায়ে তার নাকের ওপরে আঘাত করলে তিনি লুটিয়ে পড়েন।
হামলায় আহত রহমত উল্লাহ জানান, “তিনি হেযবুত তওহীদের হাতিয়া উপজেলার আমির। তার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ি উপজেলার ১নং হরনি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের উত্তর আদর্শ গ্রামে। গতকাল রাতে ইফতার শেষে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি। এ সময় পার্শ্ববর্তী সোহরাব হোসেনের স্ত্রী নেহার বেগম ওই বাসায় যান। পরে বাসা থেকে বেরিয়ে এখানে বাইরের লোক নিয়ে হেযবুত তওহীদ মিটিং করছে বলে গুজব ছড়ায়। বিষয়টি নেহার বেগম মুঠোফোনে বাজারের আজিম নগর ক্লাবের সদস্য রায়হানকে জানায়। এরপর রাত ৯টার দিকে আলী বাজার এলাকার ইউসুফ হাজির নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। হামলায় ১১ জন আহত হয়েছেন। তার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ে গিয়েছে হামলাকারীরা। এছাড়া বাবুল উদ্দিন, সামিম ড্রাইভার, মৃত খোকন উদ্দিন ও বাবুল হুজুরের বাড়িতে হামলা করে নগদ টাকা সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে সন্ত্রাসীরা। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে মাইজদী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। আহত দু’জনের অবস্থা গুরুতর।” হামলা চলাকালে স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে হামলার জন্য লোক ডাকা হয় বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে কথা হলে নোয়াখালী জেলা হেযবুত তওহীদের আমির আশিক মিয়া জানান, একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে হেযবুত তওহীদ সদস্যদের ওপরে হামলা চালিয়েছে। এর আগেও এরা কয়েকবার হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
হাতিয়া থানার চেয়ারম্যানঘাট ফাঁড়ির এসআই আব্দুল বাতেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গতকাল খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আদর্শগত পার্থক্যের কারণে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। এর আগেও এই এলাকায় কয়েকবার হেযবুত তওহীদের সদস্যদের ওপরে হামলা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।