Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: একজন অগ্রণী সমাজ সংস্কারক - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: একজন অগ্রণী সমাজ সংস্কারক

June 09, 2024 01:31:39 PM   রিয়াদুল হাসান
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম: একজন অগ্রণী সমাজ সংস্কারক

রিয়াদুল হাসান:
বাংলাদেশের একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের এমাম। প্রতিষ্ঠিত সমাজব্যবস্থার যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ উচ্চারণ ইতোমধ্যেই তাঁকে এনে দিয়েছে সুপরিচিতি। জন্ম ২৮ নভেম্বর, ১৯৭২। নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার পোরকরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা নুরুল হক এবং মাতা হোসনে-আরা বেগম। পিতা জনপ্রিয় ইউপি সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন দুই যুগব্যাপী।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
কুমিল্লার নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি ১৯৯৩ সনে স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষে ব্যবসার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।

IMG_0193বেকারত্ব মোকাবেলায় তৈরি ক্ষুদ্র পোশাক কারখানা পরিদর্শন করছেন এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

সামাজিক কার্যক্রম ও হেযবুত তওহীদ
সমাজে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার গভীর উদ্বেগ এবং বিশ্বব্যাপী মুসলমান জাতিকে দুর্দশা থেকে মুক্ত করার প্রবল ইচ্ছা থেকে তিনি সামাজিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে টাঙ্গাইলের করটিয়ার জমিদার পরিবার ও ঐতিহ্যবাহী সুলতানি পরিবারের উত্তরসুরী, হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর সংস্পর্শে আসেন। সেই থেকে তিনি ক্লান্তিহীনভাবে ছুটে চলেছেন শহর থেকে শহরে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, কথা বলে চলেছেন রাজধানীর অভিজাত মিলনায়তন থেকে গ্রামের উঠোনে উঠোনে। তাঁর বজ্রকণ্ঠ প্রতিধ্বনি তুলছে আজ বাংলার ঘরে ঘরে। হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ তুলে ধরেছেন। যে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম করে চলেছেন সেগুলো হল:

উগ্রবাদ এবং ধর্মের অপব্যবহার: ইসলামের উগ্রবাদী ব্যাখ্যা থেকে জঙ্গিবাদ নামক বৈশ্বিক সংকটের উদ্ভব হয়েছে। কেবল শক্তি প্রয়োগ করে জঙ্গিবাদসহ কোনো মতবাদগত সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি পাল্টা আদর্শ। তিনি জঙ্গিবাদের ভুলগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি এর সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরছেন।

ধর্মব্যবসা: ধর্ম এসেছে মানবসমাজে শান্তি ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য। একে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করেছে একটি পুরোহিত শ্রেণি। ইসলামে ধর্মকে পেশা বা ব্যবসা হিসাবে ব্যবহার করার কোনো অনুমতি নেই। তিনি ধর্মের নামে স্বার্থহাসিলের বিরুদ্ধে অকাট্য দলিল-প্রমাণ ও যুক্তি তুলে ধরছেন।

ইসলামের নামে অপরাজনীতি: পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অনুকরণে অনেক ইসলামী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তাদের ভোটব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করছে। অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে ভোটের প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা করছে এবং মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে অপব্যবহার করছে। রাজনীতিতে ধর্মের এই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে তিনি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরছেন।

সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ: ধর্মীয় সমাবেশ থেকে ভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও সংখালঘুর উপর নির্যাতনের ফতোয়া বন্ধ করার জন্য তিনি সংগ্রাম করছেন। সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক বিভক্তি দূর করে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপন ও এক পিতা-মাতার সন্তান হিসাবে সমগ্র মানবজাতিকে এক জাতিতে পরিণত করার উপায় তিনি তুলে ধরছেন।

নারীবিদ্বেষী ফতোয়াবাজি: ইসলাম নারীকে চার দেওয়ালে বন্দী করে না। বরং প্রকৃত ইসলামের যুগে নারীরা নতুন সভ্যতা নির্মাণের কাজে পুরুষের পাশাপাশি শ্রম দিয়েছেন ও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু আজ সেই নারীদেরকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে পর্দাপ্রথার নামে বাড়াবাড়ি করে। হেযবুত তওহীদের এমাম নারী বিদ্বেষী ফতোয়াবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করছেন।

বিপথগামী তারুণ্য: তিনি দেশের যুব সমাজকে দুর্নীতি, মাদকাসক্তি এবং ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি আসক্তি থেকে উদ্ধার করতে তাদের নিয়ে নিয়মিত সেমিনার করে কাউন্সেলিং করে থাকেন। তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার চিন্তা করে তিনি অর্ধ শতাধিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

দারিদ্র্য বিমোচন: তিনি নিজ এলাকায় ৫০টিরও বেশি উন্নয়ন প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গরুর খামার, মাছের খামার, খাদ্যশস্য আবাদ, সবজি চাষ, গার্মেন্টস কারখানা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা, হাসপাতাল, মসজিদ নির্মাণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রদর্শনের জন্য বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে থাকেন। এভাবে একটি প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদকে তিনি একটি উন্নত শহরে রূপান্তরিত করেছেন।

অশিক্ষার অন্ধকার দূরীকরণ: এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো সঞ্চারের জন্য বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে একটি বিদ্যালয় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তরুণ শিক্ষকমণ্ডলী শিক্ষকতা করছেন। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিনোদন, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, শিক্ষা সফর, কারিগরি শিক্ষা প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বের উপযোগী নাগরিকে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

03.09.2022_Uttara, Dhaka_Protest Pabna Attack Shaheed Sujan_Emam Speech  (74)হেযবুত তওহীদের পাবনা কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা ও সুজন হত্যার প্রতিবাদে ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে উত্তরায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে বক্তব্য রাখেন এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

আদর্শিক সাহিত্য ও বই:
রেনেসাঁ সৃষ্টির পূর্বশর্ত মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন সাধন করা। সে লক্ষে বক্তৃতার পাশাপাশি কলম হাতেও তিনি সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবছর বই মেলায় তাঁর লেখা বই প্রকাশিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দশটি। এর মধ্যে “ধর্মব্যবসার ফাঁদে” বইটি সচেতন ব্যক্তিদের চিন্তার জগতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, অজস্র মানুষের কালঘুম ভেঙেছে। তিনি দুটো দৈনিক পত্রিকাসহ বেশ কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল ও টিভি পরিচালনা করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি বিপুল জনপ্রিয়তার অধিকারী।

উগ্রবাদী হামলার শিকার:
ইসলাম নিয়ে তাঁর প্রগতিশীল ব্যাখ্যা চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর নজরে আসার পর তিনি তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ধর্মব্যবসায়ী এবং উগ্রবাদী গোষ্ঠী চারবার তাঁর বাড়িতে আক্রমণ করেছে, লুটপাট করেছে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তারা এই আন্দোলনের দুইজন সদস্যকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছে। প্রাণনাশের হুমকি ও আক্রমণকে উপেক্ষা করেও তিনি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ও দৃঢ় রয়েছেন।

Emam Crest Shamsul Arefin১৮-১২-২০১৮ ইং রাজধানীর শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত দৈনিক বজ্রশক্তির ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি একজন প্রকৃত কর্মবীর। একইসাথে তিনি ইসলামের প্রকৃত আদর্শের প্রচার, বহুমুখী সমাজ সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের জাতীয় টেলিভিশনে এসব উন্নয়ন কর্মাণ্ডের উপর তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়েছে। তিনি তাঁর সার্বিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল, শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে নারী ও শিশুরা সর্বোচ্চ অধিকার নিরাপত্তা লাভ করবে। সেখানে সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত হবে। যেখানে থাকবে না কোনো উগ্রপন্থা, কোনো বিজ্ঞানবিরোধী কুসংস্কার, থাকবে না রাজনীতির নামে মানুষকে শোষণ করার সুযোগ। এমন সমাজের মডেল তিনি ইতোমধ্যেই তাঁর স্মার্ট ভিলেজ প্রকল্পের মাধ্যমে নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তাঁর বক্তব্য জানার জন্য, তাঁর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য।