Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / মানবজাতি হোক এক পরিবার- হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

মানবজাতি হোক এক পরিবার- হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

June 09, 2024 12:28:50 PM   স্টাফ রিপোর্টার
মানবজাতি হোক এক পরিবার- হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

স্টাফ রিপোর্টার:
‘মানবজাতি হোক এক পরিবার’ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
গত শনিবার (৮ জুন ২০২৪ ইং) বিকাল ০৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া কনফারেন্স হলে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি অর্জনে করণীয় প্রসঙ্গে হেযবুত তওহীদ কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন। 
সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, সমগ্র মানবজাতি প্রকৃতপক্ষে এক পরিবার, এক বাবা-মা আদম হাওয়ার সন্তান। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের ভাষ্যমতেও মানবজাতি এক পিতামাতা থেকে আগত। যেমন: সনাতন ধর্মগ্রন্থে এই আদি পিতামাতাকে বলা হয়েছে মনু ও শতরূপা, বাইবেলে বলা হয়েছে অ্যাডাম ও ইভ, ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে আদম ও হাওয়া। এই এক জোড়া দম্পতি, একটি পরিবার থেকেই পুরো মানবজাতির সৃষ্টি। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে আমরা সবাই আদিতে গিয়ে এক। সৃষ্টিগত ও প্রকৃতিগতভাবে আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই। তেমনি সব ধর্মমতেও আমাদের স্রষ্টা একজন যদিও তাকে আমরা একেক ধর্মে একে নামে আহ্বান করি। কেউ বলে আল্লাহ, কেউ ঈশ্বর, কেউ ভগবান, কেউ গড, কেউ জিহোভা, কেউ এলি। কিন্তু মূল পরিচয় আমরা সবাই মানুষ, আমরা এক জাতি, একই স্রষ্টার সৃষ্টি, একই পিতামাতা আদম হাওয়ার সন্তান। মানবজাতির মধ্যে এই চেতনার সঞ্চার করতে, তাদের অন্তর্নিহিত পরিচয়কে উদ্ভাসিত করতে এবং তাদের মধ্যে ঐক্য চেতনা সৃষ্টি করার প্রয়াস নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ।  
তিনি বলেন, ‘শুধু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টিই নয়, যাবতীয় উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় গোড়ামি, ফতোয়াবাজি, অপরাজনীতি, নারীবিদ্বেষ, ধর্মব্যবসা ইত্যাদির বিরুদ্ধে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের সামনে তুলে ধরতে গত তিন দশক ধরে মাঠে ময়দানে হেযবুত তওহীদের নিবেদিত প্রাণ, নির্ভীক সদস্য-সদস্যারা কাজ করছে। বাংলাদেশে বসবাসরত সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে আমরা ‘সকল ধর্মের মর্মকথা সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’- এই বিষয়ে বহু সর্বধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এসব অনুষ্ঠানে মুসলমানরা ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী, ধর্মগুরু ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।’ 
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমাদের দেশের একটি কট্টরপন্থী-সাম্প্রাদায়িক গোষ্ঠী ধর্মীয় সমাবেশে উস্কানিমূলক, উগ্রবাদী, অযৌক্তিক, বিজ্ঞানবিরোধী, নারীবিদ্বেষী ফতোয়া ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য এ দেশকে একটি অকার্যকর মোল্লাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশে ২৪ হাজারের বেশি সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২-২০২১ পর্যন্ত ৯ বছরে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ৩ হাজার ৬৭৯টি হামলা হয়েছে। একইভাবে ২০১২ সালে ফেসবুকে গুজব রটিয়ে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহারে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুষ্কৃতিকারীরা। এদেশে উগ্রবাদীরা ২০১৬ সালে রাতের বেলায় ঢাকার গুলশানের মত এলাকায় হোটেলে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন মানুষকে জবাই করে হত্যা করেছে। এ সমস্ত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডকে তারা ইসলাম ধর্মের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। বলা বাহুল্য যে, এ সকল কর্মকাণ্ড ইসলামের মূল শিক্ষা ও আদর্শের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। অনেকক্ষেত্রে ইসলামবিদ্বেষ প্রচারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয় এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করা হয়।
এই চিত্র শুধু আমাদের দেশে নয়। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বৈশ্বিক পরিসংখ্যানের দিকে যদি তাকাই তাহলেও এক ভয়াবহ চিত্র চোখে পড়ে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (ঘঈজই) অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০০ থেকে ১,০০০ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স ২০২২ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে নাইজেরিয়াতে প্রায় ১০,০০০ লোক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মতে, ২০০৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইরাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় আনুমানিক ২,৫০,০০০ লোক নিহত হয়েছে। এদিকে মিয়ানমারে ২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গা মুসলমান ও রাখাইন বৌদ্ধদের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রায় ৫০,০০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন এবং ১০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই হচ্ছে বৈশ্বিক অবস্থা। 
আমরা বিশ্বাস করি, যারা উগ্রবাদ লালন করে, সমাজে ত্রাসের সৃষ্টি করে তারা কখনো প্রকৃত ধার্মিক হতে পারে না। এরা করুণাময় আল্লাহর প্রতিনিধি নয়। এরা যেমন মোহাম্মদ (সা.) এর অনুসারী নয়, তেমনি যিশু, কৃষ্ণ বা বুদ্ধের অনুসারীও নয়। তথাপি এসব উগ্রপন্থীদের অপকর্ম ইসলামকে কালিমালিপ্ত করছে। আর যারা ইসলামবিরোধী তারা ইসলামকে ‘সন্ত্রাসের ধর্ম’ হিসাবে প্রচারণা চালিয়ে ইসলামভীতি সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছে। 
তিনি বলেন, হেযবুত তওহীদ মনে করে যদি সকল ধর্মের মধ্যে বর্ণিত সাম্প্রদায়িক সংহতির শিক্ষাকে মানুষের কাছে তুলে ধরা যায় তাহলে এই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দেয়াল লুপ্ত হয়ে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠবে। কেননা ধর্মের অপব্যাখ্যাই এই বিভাজনের দেওয়াল সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতপক্ষে সকল ধর্মের মূল বাণী এক। সেগুলো মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের কথা বলে। স্রষ্টা ধর্ম প্রেরণ করেছেন মানুষের শান্তির জন্য। তাই তিনি এমন কোনো বিধান দিতে পারেন না যা দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করবে। সকল ধর্মের মৌলিক বিশ্বাসগুলোও প্রায় এক। সব ধর্মেই পরকালের কথা বলা হয়েছে। ভালো কাজের বিনিময়ে স্বর্গ ও মন্দকাজের বিনিময়ে নরকবাসের কথা বলা হয়েছে। সব ধর্মই আমাদেরকে একই ধরনের ন্যায় ও অন্যায়ের ধারণা দেয়। সব ধর্মই মিথ্যা বলা, চুরি করা, ব্যভিচার করা, দুর্বলের উপর অত্যাচার করাকে নিষিদ্ধ করে। এটাই সকল ধর্মের চিরন্তন, সনাতন ও মূল শিক্ষা। আল্লাহ মোহাম্মদ (সা.) কে নির্দেশ দিচ্ছেন পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসারীদেরকে এক ও অভিন্ন স্রষ্টার আনুগত্য করার মাধ্যমে বিশ্বমানবের ঐক্য গড়ে তোলার জন্য। তিনি রসুলকে বলছেন, ‘বল, ‘হে আহলে কিতাব! এমন এক কথার দিকে এসো, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই, তা এই যে, আমরা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো আনুগত্য করব না এবং কোন কিছুকে তাঁর অংশীদার করব না এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাদের মধ্যে কেউ কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করব না।’ (সুরা ইমরান ১০৮)।

1717851401300 2

বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, পূজার সময় আসলে সরকার পূজা মণ্ডপে শত শত পুলিশ মোতায়েন করে। ঐ একই অবস্থা ভারতে। সেখানে ঈদের জামাতে শত শত পুলিশ পাহারা দেয়। কিন্তু এভাবে অনিরাপদ পরিবেশে বসবাস করে কি আনন্দ উৎসব করা যায়? পাহারা দিয়ে তো এই অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না। সরকারের কাছে শক্তি আছে, তাই তারা শক্তি প্রয়োগ করে উগ্রবাদের মোকাবেলা করতে চাচ্ছেন, নতুন নতুন আইন বানাচ্ছেন, দাঙ্গাবাজদের ধরে এনে ফাঁসি বা জেল দিচ্ছেন। আমাদের কথা হচ্ছে, শুধু শক্তি প্রয়োগ করে এই সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবেলা করা যাবে না। এর মোকাবেলা করতে লাগবে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা। যে অপব্যাখ্যা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে তা মোকাবেলা করতে হলে তাদের সামনে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ও আদর্শ তুলে ধরতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। 
সবশেষে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সকল ধর্মের মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ না হতে পারি তাহলে তার সুযোগ নেবে অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো। তাদের কোনো ধর্ম নাই, মানবতা নাই, ন্যায়-অন্যায় নাই। তারা যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে অস্ত্র ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চায়। তারা গড, এলি, ভগবান কোনটাতেই বিশ্বাসী নয়। তাদের কাছে বাইবেল, বেদ, কোর’আন কোনকিছুরই সম্মান নাই। তারা চায় ক্ষমতা, তারা চায় ভোগবিলাস। এজন্য বাকি পৃথিবীর সম্পদ সাপটে নিয়ে তারা নিজেদের দেশে জমা করছে। এংগাস মেডিসনের হিসাব অনুযায়ী অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত জিডিপির ক্ষেত্রে ভারত ছিল এক বৃহত্তম অর্থনীতি, যার অর্ধেক মান মুঘল বাংলা থেকে এসেছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা যখন চলে যায়, তখন ভারতবর্ষের তিন কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা গেছে। তাদের সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির ফলে বর্তমানে মাত্র ১০% ধনীর হাতে বিশ্বের ৮২% সম্পদ জমা আছে। বিপরীতে, বৈশ্বিক জনসংখ্যার নিচের ৫০% মানুষের কাছে বিশ্বের মোট সম্পদের ১% এরও কম রয়েছে। এই সম্পদ দিয়ে তারা মারণাস্ত্র তৈরি করছে। অস্ত্র বিক্রির বাজার সৃষ্টির জন্য তারা জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে, গোত্রে গোত্রে সংঘাত লাগাতে চায়। এটাই তাদের ব্যবসা। আমাদের দেশ যেন ইরাক, ইরান, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান, বসনিয়া, চেচনিয়ার মত যুদ্ধভূমিতে পরিণত না হয় সেজন্য এখানে রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার, ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তার রোধ করা অবশ্যম্ভাবী। আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছাড়া উগ্রবাদ মোকাবেলা অসম্ভব। এজন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই।