Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সম্পাদকীয় / অনগ্রসর রেলখাত, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত হোক - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

অনগ্রসর রেলখাত, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত হোক

February 02, 2023 05:01:56 PM   সম্পাদকীয়
অনগ্রসর রেলখাত, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত হোক

দেশে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন হিসেবে জনপ্রিয় হলেও রেলের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত হলেও এগুলোর সমাধানে বাস্তবসম্মত পদ¶েপ নিতে দেখা যায় না। আমরা মনে করি, অন্তত সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে হলেও রেলের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পদ¶েপ নেওয়া হবে। গত এক যুগে রেলে বিপুল অঙ্কের অর্থের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে; চলমান রয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থের উন্নয়ন প্রকল্প। তারপরও যাত্রীসেবার মান বাড়ছে না।
উদ্বেগজনক হলো, কোনোভাবেই বাড়ছে না ট্রেনের গতি। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন অত্যাধুনিক ইঞ্জিন-কোচ রেলবহরে যুক্ত করেও আসছে না কাঙ্ক্ষিত ফল; উলটো গতি নেমে আসছে ৬০ কিলোমিটারে। জরাজীর্ণ রেললাইনের কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। ৭৩ শতাংশ ইঞ্জিন ও ৫২ শতাংশ কোচ মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ১ হাজার ৩৫০টি অবৈধ লেভেল ক্রসিংও গতি নেমে আসার জন্য অনেকটাই দায়ী। লাইন সংস্কারে প্রতিবছর বরাদ্দ থাকে মোটা অঙ্কের অর্থ। প্রশ্ন হলো, তারপরও কেন সেখানে লাগে না উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত ছোঁয়া। সারা দেশে বিদ্যমান রেলপথের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ এখনো চরম ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি রেলব্রিজগুলোর অবস্থাও শোচনীয়।
গত এক যুগে রেলের উন্নয়নে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তার প্রায় ৮৫ শতাংশ অর্থই খরচ হয়েছে নতুন রেলপথ তৈরি, রেলের ইঞ্জিন-কোচ ক্রয়, র¶ণাবে¶ণ ও বেতন-ভাতা বাবদ। জরাজীর্ণ রেলপথ বরাবরই উপে¶িত থাকছে বছরের পর বছর। বস্তুত ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের মিল না থাকায় এ সংস্থার লোকসান বাড়ছে লাফিয়ে। লাগাম টানতে দুই দফা ভাড়া বাড়ানো হলেও সেবার মান বাড়ছে না। এত প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও সাধারণ যাত্রীরা এগুলোর সুফল পাচ্ছে না? উন্নত প্রযুক্তি ও অবকাঠামো, দ্রুতগতির ট্রেন, সময়মতো চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান উন্নত করে বহু দেশ তাদের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে স¶ম হলেও আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।
যেসব দেশের রেলওয়ে লাভজনক, সেসব দেশে তারা সেবা নিশ্চিত করেই তা করেছে। অন্যরা পারলে আমরা পারব না কেন? জানা যায়, বিদ্যমান রেলপথের প্রায় ৭৫ শতাংশই বড় ধরনের মেরামত প্রয়োজন। এদিকে রেলে বর্তমানে অত্যাধুনিক ট্যাম্পিং মেশিনের প্রয়োজন নূন্যতম ১৫টি। বর্তমানে সারা দেশে এ মেশিন মাত্র ৪টি রয়েছে, যার দুটি দীর্ঘদিন অকেজো। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে হেঁটে হেঁটে রেললাইন দেখাশোনা করা হয়। এ প্রে¶াপটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হলেও সার্বিকভাবে রেলের সেবার মান বাড়বে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়? যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের রুগ্ণ দশা কাটছে না, সেহেতু এ সংস্থার সর্ব¶েত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপ¶কে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। রেলপথকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্যও নিতে হবে পদ¶েপ। লোকসান ও অপচয় বন্ধে কর্তৃপ¶কে কঠোর হতে হবে। বস্তুত চুরি-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর হাতে দমন করা না গেলে রেলের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ থেকেই যায়।