Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সম্পাদকীয় / বাঙালির জীবনে সুলতানী ঈদ সার্থক হোক - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

বাঙালির জীবনে সুলতানী ঈদ সার্থক হোক

April 01, 2025 08:28:35 PM   অনলাইন ডেস্ক
বাঙালির জীবনে সুলতানী ঈদ সার্থক হোক

আজ ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস রমজানের সিয়াম সাধনার পর মুসলিমদের ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আমেজ। কোনো আনন্দ তখনই উৎসবে রূপ নেয়, যখন তা সর্বসাধারণের আনন্দে পরিণত হয়। ধনী-গরীব নির্বিশেষে ইসলাম যেমন সবার জন্য, ঈদও সবার জন্য। তাই ঈদের আনন্দে যাতে সবাই অংশ নিতে পারে সেজন্য ঈদের আগেই ফিতরা প্রদানের নিয়ম। এছাড়াও রয়েছে রমজানের কাফফারাসহ বিভিন্ন কারণে দানের নির্দেশনা। রয়েছে যাকাতের বিধানও। মনে রাখতে হবে, ঈদুল ফিতর হলো দানের উৎসব।

সুলতানী আমলের আদলে ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছেন নতুন সরকার। জামায়াতের পর সজ্জিত হাতি, ঘোড়া নিয়ে ঈদ মিছিল এবং ঈদ মেলার আয়োজন যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ সকলের সমাগম ও পদচারণায় এই মেলা সর্বধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়। বহুবছর পর এমন আয়োজন জনমানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ, উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।

ইসলামের সৌন্দর্য এখানেই। যে আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির বার্তা নিয়ে রমজান মাস এসেছিল, আমরা সেই বার্তা কতটুকু হৃদয়ঙ্গম করতে পারলাম, নিজেদের চরিত্রে কতটুকু সংযম ও কতটুকু সহমর্মিতা ধারণ করতে পারলাম, আত্মাকে কতটুকু পরিশুদ্ধ করতে পারলাম, সেটার পরীক্ষা নেওয়ার জন্যই আল্লাহ রাখলেন রমজান শেষে দানের উৎসব। সমস্যা হলো আমরা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার ভিড়ে তার মর্মবাণী ভুলে যাই। ঈদুল ফিতরের মর্মবাণী যদি সবাই বুঝতেন, তাহলে ঈদের আনন্দ আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেত।  

প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও ঘরে ফেরা মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদের কয়েকদিন আগে রাস্তাঘাট, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ছিল ভোগান্তিও। অন্যান্য বছরের চাইতে এই বছর মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাহাকার দেখা গেছে আরও বেশি। নিম্নবিত্তের মানুষ যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি নিয়ে ঈদ করতে পারলেও মধ্যবিত্তরা না পেরেছেন চাইতে, না পেরেছেন চালিয়ে নিতে। সন্তানের জন্য একটা ঈদের জামা কিনতেও তাদেরকে ক্যালকুলেটর নিয়ে বসতে হয়েছে। ঈদ কি তাদের জীবনে কখনই আসবে না?

আরেকটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না- আজ এমন একটি সময়ে আমরা ঈদ উদযাপন করছি, যখন সারা বিশ্বে প্রায় ৭ কোটি মুসলমান উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে। ঘরের পাশে মিয়ানমার থেকে দশ লক্ষ মুসলমানকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশে। ওদিকে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর চলছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। গত ১৯ মাসে ফিলিস্তিনের ৬২ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছে লক্ষাধিক। এবছর একদিনে ৫০০ মানুষ মারার রেকর্ড করেছে ইসরায়েলিরা। ঈদ উপলক্ষেও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে দেয় নি ইসরায়েল। গত বছর বিশ লক্ষ মানুষ শরণার্থী শিবিরে ঘাস-পাতা দিয়ে ইফতার করেছে। এবছর তাও পায়নি। তাদের জীবনে ঈদ নেই, ঈদ আসে না কবে আসবে তাও অজানা।

ফিলিস্তিনিদের মতো বাংলাদেশেও আজকে একটি উগ্রবাদী শ্রেণির দ্বারা ধর্মীয় ভিন্ন মতাবলম্বীরা মবের শিকার হয়ে ঘর-বাড়ি ছাড়া। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এমনকি ঈদ উদযাপনে পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায় নি। স্বাধীন দেশে তাদেরও নিরানন্দ ঈদ কাটছে।

বছরের একটি দিন সারা দেশ আনন্দে মেতে উঠুক, আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক অট্টালিকা থেকে কুড়েঘর, শহর থেকে গ্রাম, নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ সবার মাঝে। ঈদ সার্থক হোক, আনন্দময় হোক, সার্বজনীন হোক ও তাৎপর্যপূর্ণ হোক। সবাইকে ঈদ মোবারক।