
বেনাপোল সংবাদদাতা:
যশোরের বেনাপোল পৌরসভার হাকর নদীতে অবৈধ দখলদারদের কারণে বন্ধ হয়ে পড়েছে সাদিপুর চেকপোস্ট থেকে নারায়নপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার হাকর নদী খনন ও ড্রেজিংয়ের কাজ। সীমান্তবর্তী বেনাপোল অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে এবং ভারতের ইসামতি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত বেনাপোলের একমাত্র হাকর নদীর অবৈধ দখল মুক্ত করে পানির প্রবাহ সচল রাখার জন্য পুনরায় খনন কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছে বেনাপোল পৌর এলাকার সচেতন মহল। এর আগে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ ৬৮ বছর পর ২০২৩ সালে শুরু হয়েছিল এই খনন কাজ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেনাপোলের উপদেষ্টা ও বেনাপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, ভারী বর্ষণের সময় বেনাপোল পৌর এলাকার নিচু গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং স্থলবন্দর এলাকায় পণ্যগারে রাখা কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়। তাই পৌর এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পানির প্রবাহ সচল রাখতে বেনাপোলে শুরু হওয়া হাকর নদী খনন কাজ পুনরায় চালু হওয়া জরুরি। বিগত ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ভারত সীমান্ত সংলগ্ন যশোরের বেনাপোল জনপদের পানির প্রবাহ সচল রাখতে সাদিপুর চেকপোস্ট থেকে নারায়নপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার হাকর নদী খনন ও ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়।
তৎকালীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান (বদলী) জানান, প্রাথমিকভাবে পাঁচ কিলোমিটার খনন করা হলেও পরবর্তীতে ভারতের ইসামতি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত প্রবাহমান হাকর নদীটির দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার ধাপে ধাপে খনন করার পরিকল্পনা ছিল। পাঁচ কিলোমিটার নদী খনন কাজের প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার ৯৪ টাকা এবং প্রকল্পটির খনন কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ছিল চট্টগ্রামের ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স। খনন কাজ শুরুর প্রথম থেকেই হাকর নদীতে অবৈধ স্থানীয় দখলদারদের বাধায় খনন কাজ বন্ধ হয়ে পড়লেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপে আইনি লড়াই শেষে কয়েক মাস পর খনন কাজ আবারও শুরু হয়ে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার খনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বেনাপোল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ডা. শাহাজালাল খান মন্টু বলেন, ২০২৩ সালে ৯ জানুয়ারি বেনাপোলে হাকর নদী খনন কাজ শুরু হলে বেনাপোলবাসী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রভাবশালী দখলদারদের কারণে এই প্রকল্প অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। বর্তমান খনন অংশে কচুরিপানায় ভরে গেছে এবং ব্যাপকহারে মশা বিস্তার করেছে। এই হাকর নদী প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে বেনাপোল পৌর এলাকা ভবিষ্যতে পরিণত হবে এক বিপর্যয়ে। প্রতি বছর পানি নিষ্কাশনের অভাবে কোটি কোটি টাকার পণ্য ভিজে নষ্ট হচ্ছে বন্দরে। দ্রুত এই হাকর নদী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং বাতিল হওয়ায় বেনাপোলের হাকর নদী খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। খনন প্রক্রিয়া অসম্পন্ন হওয়া নিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় অবৈধ দখলদাররা হাইকোর্টে রিট করে নিষেধাজ্ঞা নেওয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সময়মতো কাজ সম্পন্ন না করতে পারায় যতটুকু কাজ হয়েছে, ততটুকুর বিল উত্তোলন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের পুনরায় হাকর নদী খননের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নতুনভাবে আবেদন করলে নতুন প্রকল্পের আওতায় খনন কাজ পুনরায় শুরু করা যেতে পারে।
শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জেলা পরিষদের মিটিংয়ে জেলা নদী রক্ষা কমিটিতে বিষয়টি উপস্থাপন করবো এবং পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে জানাবো। জনস্বার্থে হাকর নদী খননের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ পূর্বক খনন কাজ পুনরায় শুরু করতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকার জনগণ।