Date: April 29, 2024

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সম্পাদকীয় / আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, দেশ ও সমাজ গঠনে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, দেশ ও সমাজ গঠনে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে

March 08, 2023 05:54:20 PM   সম্পাদকীয়
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, দেশ ও সমাজ গঠনে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু এর পিছনের সংগ্রামের গল্পটা বহু পূর্বের। সর্বপ্রথম ১৮৫৭ সালের এ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের এক সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা ভোটাধিকারসহ তাদের মর্যাদার সাথে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু বিষয় নিয়ে আন্দোলন করলে পুলিশ তাদের প্রতিহত করে। পরবর্তীতে ১৯১০ সালে জার্মান নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন এ দিনটিকে নারী দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। ১৯১১ সাল থেকে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দেশে এ দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে পালন করা হলেও জাতিসংঘের ঘোষণার পর পরই দিবসটি সত্যিকার অর্থে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং প্রতি বছর জাতিসংঘের অন্তর্ভূক্ত দেশগুলো এ দিবসটিকে সরকারিভাবে পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও এ দিনটি সরকারি-বেসরকারিভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। মূলত নারীদের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক উন্নয়নে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দিবসটিকে পালন করা হয়। এবারের নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো, “প্রযুক্তি ও উদ্বোধন, জেন্ডার সমতার লক্ষ্যে।” 
তবে প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই বলতে হয়, নারী আজও তার প্রকৃত অধিকার অর্জনে সক্ষম হয়নি। বস্তুবাদী সভ্যতার ‘দিবস কেন্দ্রিক’ ফাঁদে নারী আজ নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। একটি সমাজ গঠনে নারীর যে ভূমিকা থাকার প্রয়োজন ছিল তা আজ আমাদের সমাজে একদমই দেখা যায় না। ‘সমতা’র নামে নারীকে আজও নিষ্পেষিত করা হচ্ছে, নারীকে আজও তার প্রকৃত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, আজও আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের উপর চলছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার ও অন্ধত্ব এর পিছনে মূল দায়ী।
যারা নারীকে সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেয় না তারা মূলত নারীকে পর্দার আড়ালে রেখে এখনও পণ্য হিসেবেই পরিগণিত করে। এ শ্রেণিটি ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে নারীদের বস্তাবন্দী করায় ব্যস্ত। তারা নারীকে সমাজের প্রতিটি কাজে শালীনতার সাথে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে চায় না। একটি সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যাই যেখানে নারী সেখানে নারীকে পিছনে রেখে সমাজ ও দেশের উন্নতি কীভাবে সম্ভব?
আবার যারা ‘জেন্ডার সমতা’ বলতে নারী ও পুরুষকে সমান সমান হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন তাদেরকেও বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। নারী ও পুরুষের মধ্যকার শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পার্থক্য বিদ্যমান। সমতার নামে নারীকে যদি পুরুষের মত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কায়িক শ্রম করানো হয় তবে সেক্ষেত্রেও নারীর সঠিক মর্যাদা অর্জিত হয় না। বরং নারী তার যোগ্যতা অনুসারে প্রতিটি জায়গায় গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ যদি পায় তবেই সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ধরা উচিত। আর বর্তমানের তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে নারীকে পুরুষের পাশাপাশি থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত হতেই হবে। কারণ পৃথিবী ও বিশ্বসভ্যতা যে গতিতে এগোচ্ছে তাতে নারীর পিছিয়ে পড়া মানেই দেশ ও জাতির কয়েক ক্রোশ পিছিয়ে পড়া। 
অতএব নারী দিবসে আমাদের সকলকে দেশ ও জাতি গঠনে নারীদের এগিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন চুক্তি সাক্ষর করেছে ও নানাবিধ প্রকল্প হাতে নিয়েছে যা নারীদের যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা করবে। এছাড়াও নারীদের নিয়ে যে সকল সামাজিক সংগঠন কাজ করছে তাদেরকে সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে যাতে নারী ও পুরুষ উভয়ের পারস্পরিক সহযোগিতায় নিয়ে তারা একটি সুন্দর ও আদর্শিক সমাজ গঠন করতে পারে। পুরুষ ও নারী উভয়েই তাদের যোগ্যতা অনুসারে বিবেচিত হবেন এটাই নারী দিবসে আমাদের সকলের এটাই কাম্য।