
ঈদের তৃতীয় দিনেও প্রিয়জনের কাছে যেতে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। তবে সেটি আগের দু-তিন দিনের তুলনায় বেশ কম। শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, কিছুক্ষণ পরপর দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাচ্ছে। কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। তবে এদিনও বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
সকাল থেকে ঢাকা-মাওয়া এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহন ও যাত্রীর চাপ দেখা যায়নি। ঈদের দ্বিতীয় দিনের মতো আজও দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা কম। এ সুযোগ লুফে নিয়েছে ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটের লোকাল বাসগুলো। দূরপাল্লার বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে এসব বাস।
গতকালের মতো আজও আসিয়ান পরিবহন, রাইদা পরিবহন, গাবতলী পরিবহন, বাহাদুর শাহ পরিবহন এবং তুরাগ পরিববহনকে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, খুলনা ও বাগেরহাটের যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। গতকালের চেয়ে আজ সড়কে যাত্রীচাপও অনেকটাই কম।
বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করে কালীগঞ্জের এক শ্রমিক মোজাম্মেল হক বলেন, গাবতলী থেকে নিয়মিত ভাড়া ৪০০ টাকা, আর যাত্রাবাড়ী থেকে নিয়মিত ভাড়া ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। কিন্তু ঈদের তৃতীয় দিনেও বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ৬৫০ টাকায় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের টিকিট কিনেছি। ঈদের আগে তো ১২০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছে। এত টাকা খরচ করে তখন যাইনি। এখন এসেও দেখি বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। দেড়শ টাকা বেশি দিয়ে বাসে উঠলাম।
গতকাল শুক্রবার শরীয়তপুর, জাজিরা, ভাঙ্গা, মাদারীপুরের ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা। এছাড়া তুরাগ পরিবহনে ৪০০ টাকা ভাড়ায় ভাঙ্গা পর্যন্ত। আসিয়ান, রাইদা, এবং বাহাদুর শাহ পরিবহনে ৭০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুণতে হয়েছে যাত্রী। ঈদ স্পেশাল দোতালা বিআরটিসি বাসে ৭০০ টাকা ভাড়ায় যাত্রীরা গ্রামে ফিরেছেন। বাস কম থাকায় বাড়তি ভাড়া দিয়েও হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতে হয়েছে যাত্রীদের। তবে আজ সেই পরিস্থিতি নেই। তারপরও ভাড়া বেশি নিচ্ছে পরিবহনগুলো।
যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকায় ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঈদের পরদিন সড়কে যাত্রীচাপ থাকলেও আজ সেটি নেই। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে থাকে।
বেলা ১১টা নাগাদ ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাড়ছে যানবাহন। একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালীমুখী মহাসড়কে। ব্যস্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গের মহাসড়কগুলোও। গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি মিনি বাস ও প্রাইভেটকারে চড়তেও দেখা যায় ঘরমুখো মানুষদের।
যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও ধোলাইপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ সেসব এলাকার সড়কে যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ খুবই কম।
সায়েদাবাদের জনপথের মোড়ে খুলনাগামী ইমাদ পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে কথা হয় কাউন্টার ম্যানেজার আমানুল্লাহর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের ২০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছি। চাঁন রাত পর্যন্ত ওইসব যাত্রী চলে গেছেন। আজ যাত্রীর চাপ কম। মনে হচ্ছে গতকালের চেয়ে যাত্রী কম যাচ্ছে আজ। আগামীকাল যাত্রী কেমন হবে সেটাও বলা যাচ্ছে না।
একই পরিবহনে খুলনাগামী বাসের অপেক্ষায় ছিলেন ঢাকার চাকুরিজীবী আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদের আগে বাড়তি ভাড়ার কারণে যাওয়া হয়নি। তবে এখনো দুই-তিনশ টাকা বেশি নিচ্ছে।
এদিকে, মাগুরা, যশোর, বেনাপোল, বরগুনা, বরিশাল, কুয়াকাটা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, নাজিরপুর,বাগেরহাট, জয়পাশা লাহুড়ীয়াগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার রাশেদ জাগো নিউজকে বলেন, ভোর থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আনুমানিক ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি ছেড়ে গেছে। তবে গতকালের তুলনায় চাপ কম। সাড়ে ৯টার গাড়ি বেলা পৌনে ১১টায় ছেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা শুধু টিকেট বিক্রি করি, গাড়ির হিসাবটা সঠিক জানি না। এখন ফিরতি গাড়ি এলে তারপর যাত্রী নিয়ে যাবে। আমাদের সবগুলো গাড়ি ঢাকা ছেড়ে গেছে। এখন যেসব যাত্রী এসেছেন তাদের কিছুটা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।