Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / আদর্শিক বিরোধ নাকি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের ‘গেইম’? - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

আদর্শিক বিরোধ নাকি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের ‘গেইম’?

April 27, 2023 10:09:18 PM   নিজস্ব প্রতিবেদক

ওবায়দুল হক বাদল:
গত বুধবার ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নে হেযবুত তওহীদ ও ইত্তেফাকুল উলামার সদস্যদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের খবর প্রচারিত হয় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ঘটনার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি এ জেড এম নাজমুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হেযবুত তওহীদের ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে উস্কানি দিয়ে আসছে স্থানীয় একটি গোষ্ঠী। এরই ধারাবাহিকতায় ইত্তেফাকুল উলামা পরিষদের ব্যানারে গত বুধবার মিছিল নিয়ে কয়েকশ’ সন্ত্রাসী তার বাড়িতে হামলা করে। সেখানে হেযবুত তওহীদের ১০ জন স্থানীয় কর্মী আহত হয়, যাদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে ইত্তেফাকুল উলামা পরিষদের স্থানীয় নেতাদেরকে বলতে শোনা যায়, তারা হামলা করেন নি, বরং হেযবুত তওহীদের সদস্যরাই তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালিয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই দুই পক্ষ তাদের নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেছে এবং ঘটনার সম্পূর্ণ দায় অপরপক্ষের উপর চাপিয়েছে। তবে এই ঘটনার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করলে এখানে হেযবুত তওহীদ বনাম ইত্তেফাকুল উলামার বিরোধের বাইরেও অপর দুটি পক্ষের বিরোধের উপস্থিতি দেখা যাবে।
হেযবুত তওহীদের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি নাজমুল ইসলামের ছোট ভাই মোজাব্বিরুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী রাজিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। অন্যদিকে উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিম খান জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়িত। তারা দু’জনই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং বাংলাদেশের রাজনীতির স্বাভাবিক ধারা অনুযায়ী তাদের মধ্যে আধিপত্যের বিরোধ রয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, মোজাব্বিরুল ইসলামের বড় ভাই হেযবুত তওহীদে যোগ দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি ‘খানিকটা সত্য’ বলে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোজাব্বিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “হেযবুত তওহীদের সাথেই যদি তাদের বিরোধ হবে তাহলে আমার বাড়িতে কেন হামলা চালালো? আমি তো হেযবুত তওহীদ করি না!” এখানে উল্লেখ্য যে, বুধবারের এই হামলার ঘটনায় মোজাব্বিরুল ইসলামের বাড়ি ও দোকানপাটেও হামলা চালানো হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এই প্রশ্ন উদয় হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, এটা কি হেযবুত তওহীদের সাথে ইত্তেফাকুল উলামার বিরোধ, নাকি ভুয়া ইস্যু তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের প্রচেষ্টা? তাছাড়া ইত্তেফাকুল উলামা পরিষদের সমাবেশে উচাখিলা ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানকে উপস্থিত হয়ে বলতে শোনা যায়, হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে এলাকাছাড়া করা হবে। এর বাইরেও স্পষ্টত বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য দিতে শোনা যায় তাঁকে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। তবে এ ব্যাপারে সেলিম খানের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কিছুক্ষণ পরে ফিরতি কলে কথা বলবেন বলে জানান। তবে পরবর্তীতে ফোন করে তাঁকে আর পাওয়া যায় নি। কথা হচ্ছে, একজন জনপ্রতিনিধি যখন একটি দল বা গোষ্ঠীবিশেষকে উদ্দেশ করে এ ধরনের বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য দেন, বিশেষ করে যে দলটি কোনোভাবেই রাজনীতির সাথে জড়িত নয়, তখন বোঝা যায়, এখানে অন্য কোনো ‘গেম’ চলছে। কি সেই গেম? 
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করে, হেযবুত তওহীদ এখানে একটি ইস্যু মাত্র। একে ইস্যু করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যে খেলা শুরু হয়েছে তা গড়াতে পারে আরো বহুদূর। এরই মধ্যে দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। আজ শুক্রবার দুই চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেই মিছিল ও অন্যান্য কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি কোন দিকে গড়ায়, সেখানে কাকে বলির পাঠা বানানো হয়, কে ফায়দা নেয়, পুরো বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সচেতন মহলের সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। অন্যথায় একদিকে একটি উগ্রগোষ্ঠীর উস্কানি, অন্যদিকে রাজনৈতিক মহলের ইন্ধন, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির দিকে ধাবিত হতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিছু সাধারণ মানুষ, আর আড়ালে থেকে ফায়দা লুটবে সুবিধাবাদী অপরাজনৈতিক শক্তি।