সাঈদ বিন তারিক:
গত বুধবার ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জে হেযবুত তওহীদের সাথে ইত্তেফাকুল উলামা পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এসময় ইত্তেফাকুল উলামার কর্মীদের পুলিশের সামনেই তলোয়ার, রামদা, কিরিচ, লোহার রড হাতে নিয়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িঘরে হামলা চালাতে দেখা যায়। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা বাড়ির ভেতরে অবস্থান করেই আত্মরক্ষার্থে তাদের হামলা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।
এই ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিওচিত্র বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, পুলিশের সামনেই কীভাবে এতসব দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হলো?
ভিডিওতে দেখা গেছে, যারা এসব অস্ত্র হাতে নিয়ে হামলা চালাচ্ছে তাদের পুলিশ বাঁশি ফুঁকে বা হাতের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কেন অস্ত্র আইনে তাদের গ্রেফতার করা হলো না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
অস্ত্র আইন ১৮৭৮ অনুযায়ী, বাটসহ ১২ ইঞ্চির বড় ছোড়া বা চাকু বিক্রি, বহন ও আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। অর্থাৎ সরকারের অনুমতি ব্যতীত ১২ ইঞ্চির বড় অস্ত্র সংরক্ষণ, বহন করা যাবে না। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ধারালো ছোট-বড় যেকোনো অস্ত্র ব্যবহার বা বহন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বৈধ অস্ত্রের প্রকাশ্য প্রদর্শন করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ঈশ্বরগঞ্জের ওই ঘটনায় অন্তত ২৫-৩০ ইঞ্চিরও বড় ধারালো অস্ত্র হাতে পাঞ্জাবি-টুপি পড়া কিছু উগ্রবাদীদের হামলা চালাতে দেখা যায়। তার উপর প্রকাশ্য দিবালোকে অবৈধ এসব অস্ত্র হাতে মহড়া দেওয়ার পরও পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে আটক করা তো দূরের কথা, অস্ত্র আইনে কেন একটি মামলা পর্যন্ত করা হয়নি, তা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
ইশ্বরগঞ্জের ওই ঘটনার পর সেখানকার জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমের কাছে বলেন, হেযবুত তওহীদ দেশের আইন মান্য করার নীতিতে অটল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা আমাদের জন্য একটা দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন মান্য করতে গিয়ে আমরা আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার হারাচ্ছি। আইনমান্যকারী দল হিসেবে আমরা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারি না, কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ ধর্মব্যবসায়ী, উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা দুই-তিন হাত লম্বা ধারালো তলোয়ার দিয়ে আমাদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এখন এইসব অস্ত্র কারা কোথা থেকে এনেছে, তা পুলিশকে বের করে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে হবে। পাশাপাশি হামলার ঘটনায় অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এরআগেও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বা কোরবানির পশু জবাই করার ছুরি দিয়ে এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটাতে দেখা গেছে। রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় এক পোশাক শ্রমিককে মসজিদের ভেতরেই কোরবানির পশু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ওই মসজিদের ইমামকে পরবর্তীতে আটক করা হয়। আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় রামদা ব্যবহার করা হয়েছিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় কিছুদিন পরপরই দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রদের রামদা, তলোয়ার হাতে নিয়ে বের হতে দেখা যায়। গ্রাম পর্যায়ের সংঘর্ষে এখন লাঠিসোটার থেকে বেশি ধারালো জাতীয় বর্শা, ছুরি, দা, কিরিচ এসব ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে রক্তাক্ত-হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ধারালো অস্ত্র কাদের কাছে মজুত ছিল বা কারা, কী উদ্দেশ্যে এসব অস্ত্র সংরক্ষণ করে রাখছে- তা বের করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অসাধ্য কিছু নয়। ২০২১ সালের এপ্রিলে রাজধানীর দুটি মাদ্রাসা থেকে ৫৯০টি বড় বড় তলোয়ার জব্দ করে পুলিশ। সেসময় পুলিশ জানিয়েছিল, ‘তলোয়ারগুলো যেন কেউ সহিংসতার কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য এগুলো জব্দ করা হয়েছে। ঈদের সময় কোরবানির কাজে তলোয়ারগুলো ব্যবহার করা হয়। এসব অস্ত্র পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঈদের সময় প্রয়োজন হলে আবারও দেওয়া হবে।’ সুতরাং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলেই এসব দেশীয় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ধারালো এসব অস্ত্রের ব্যবহারে যথাযথ আইনি প্রয়োগ এবং তা নজরদারির মধ্যে রাখা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।