
কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি:
কাউনিয়ার বিভিন্ন গ্রামে বোরো ধান কাটামাড়াই শুরু হয়েছে। তীব্র তাপদাহ ও বৈরী আবহাওয়ার পরও চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কৃষক তাদের উৎপাদিত সোনালি ধান মাড়াই শেষে ঘরে তুলেছেন। তবে বৃষ্টি, কাদা ও উঠানের সংকটের কারণে ধান ও ভুট্টা শুকাতে কৃষকরা ব্যবহার করছেন ফিল্টার নেট।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে গ্রামীণ জনপদের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ধান মাড়াইয়ের পর চলছে ধান সিদ্ধ ও শুকানোর ব্যস্ততা। এতে গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা পর্যন্ত ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যদিও দিনে দিনে ধান সিদ্ধ ও শুকানোর পরিমাণ কমে যাচ্ছে বিভিন্ন চালকলের আধুনিক প্রক্রিয়ার কারণে।
জানা গেছে, ধান মাড়াইয়ের পর গ্রামের নারীরা চুলায় বড় বড় হাঁড়িতে ধান সিদ্ধ করছেন। এই ধান সিদ্ধের কাজ চলে বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। পরে ভোরে কেউ ভ্যানে, কেউবা সাইকেলযোগে বস্তায় করে সিদ্ধকৃত ধান বিস্তীর্ণ মাঠে শুকাতে নিয়ে যান। সেখানে ধান ফেলার আগে বড় আকারের ফিল্টার নেট বিছানো হয়। কেউ দিচ্ছেন সিদ্ধ ধান, আবার কেউ জমি থেকে কেটে আনা কাঁচা ধান। চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও এখন এই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
চরগদাই গ্রামের রহেলা বেগম জানান, এক বিঘা ধান মাড়াইয়ের পর সেটি সিদ্ধ করে নিয়ে এসেছেন। বাড়িতে ধান শুকানোর তেমন জায়গা নেই, দিনে অল্প সময়ের জন্য রোদ পাওয়া যায়, আর আকাশের অবস্থাও ভালো না। অল্প পানিতেই কাদা হয়, তাই এখানে ধান শুকাতে কম-বেশি সারাদিনের রোদ পাওয়া যায় এবং ঝামেলা হয় না। ফিল্টার নেটে ধান শুকাতে সুবিধা বেশি বলেও তিনি জানান।
হরিশ্বর গ্রামের কৃষক মেহেদী বলেন, আগে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠানে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ হতো। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অধিকাংশ বাড়ির উঠান বা ফাঁকা জায়গা নেই। সে কারণে নদীর পাড়, স্কুল মাঠ কিংবা ফসলি জমির ফাঁকা জায়গায় ফিল্টার নেট বিছিয়ে ধান শুকানো হচ্ছে। ফলে ফিল্টার নেটের চাহিদা ও ব্যবহার অনেক বেড়েছে।
বালিকা বিদ্যালয় মোড়ের ব্যবসায়ী নজরুল জানান, ধান কাটামাড়াই মৌসুমে ফিল্টার নেটের চাহিদা বেড়েছে। ধান শুকানোর কাজে এটি ব্যবহৃত হওয়ায় বিক্রিও ভালো হচ্ছে। কৃষকরা বিভিন্ন কাজে ফিল্টার নেট ব্যবহার করলেও ধান কাটার সময় এর চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার বলেন, আগে কৃষকরা উঠান বা মাঠে ধান শুকাতেন। এখন ফিল্টার নেট ব্যবহার করে যে কোনো স্থানেই ধান শুকানো যায়। এতে ধানে কোনো ময়লা থাকে না, ফলে ধানের দামও বেশি পান কৃষকরা।