Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / সিলেট / কমলগঞ্জে শিমুল ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজেছে বসন্তের রঙে - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

কমলগঞ্জে শিমুল ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজেছে বসন্তের রঙে

February 22, 2025 06:25:41 PM   উপজেলা প্রতিনিধি
কমলগঞ্জে শিমুল ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজেছে বসন্তের রঙে

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে ফুটছে শিমুল ও পলাশ ফুল। মাঘ মাসের শেষের দিকে প্রকৃতির শুষ্কতায় শিমুল ফুলের রক্তলাল রঙে প্রকৃতি সাজিয়ে তুলছে। বিশেষত কবি সাহিত্যিকদের লেখায় বারবার উঠে আসে এই শিমুল ফুলের কথা। রক্তলাল শিমুল ফুলের রং বসন্তের আগমনকে ঘোষণা করে। এ সময় চারপাশে রৌদ্রোজ্জ্বল দিন এবং বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ-আভা। প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর রূপে ভালোবাসার ডাক শোনা যায়। শিমুল ফুলের উপস্থিতি প্রকৃতির সাজে এক নতুন আভা যোগ করে।

তবে, এটি দুঃখজনক যে বর্তমানে কমলগঞ্জে শিমুল গাছের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। একসময় গ্রামবাংলায় প্রচুর শিমুল গাছ ছিল, কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ তা বিলুপ্তির পথে। সড়জমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার প্রধান সড়কগুলোতে কিছু ফুলে শিমুল ও পলাশ গাছের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও, আগের তুলনায় এখন তা একেবারে কমে গেছে। অন্যান্য গাছের মতো শিমুল গাছের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না, যার ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে।

প্রতিটি বসন্তেই শিমুল গাছের রক্তলাল ফুল প্রকৃতিকে এক বিশেষ সৌন্দর্য প্রদান করে। কিন্তু একসময় যেসব শিমুল গাছ বড় হয়ে উঠত এবং প্রকৃতিতে নতুন রঙের ছোঁয়া দিত, এখন তা কমে গেছে। বর্তমানে এমনকি কিছু গাছের মুকুল ও ফুলও দেখা যাচ্ছে না। অন্যান্য গাছের তুলনায় শিমুল গাছের উপস্থিতি কমে যাওয়ার কারণে এখন আর পুরনো সেই বসন্তের রঙ দেখা যায় না।

এছাড়া, শিমুল গাছটি শুধু সৌন্দর্যের জন্যই পরিচিত নয়, এটি ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত ছিল। বহু বছর আগে গ্রামে গ্রামে শিমুল গাছের তুলা সংগ্রহ করা হতো এবং তা বিক্রি করা হতো। গ্রামের মানুষ শিমুল গাছের তুলা দিয়ে লেপ, তোষক, বালিশ বানিয়ে তা বিক্রি করতেন। এর মাধ্যমে অনেক মানুষ স্বাবলম্বীও হয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে শিমুল গাছের রোপণ কমে যাওয়ার কারণে এই উপকারিতা এখন আর তেমনভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।

কমলগঞ্জ সরকারি স্কুলের বাংলার শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “বসন্ত মানেই শিমুল ও পলাশ ফুল। এবারের বসন্তে কমলগঞ্জে শিমুল গাছগুলোতে আগুন রাঙা নতুন রূপে প্রকৃতিকে সাজিয়েছে। এ গাছগুলি ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত ছিল, তবে এখন এটি বিলুপ্তির পথে।” তিনি আরও বলেন, “বসন্তে শিমুল ফুলের কথা মনে হলেই মনে পড়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং সেই সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতির একটি গভীর সম্পর্ক।”

কমলগঞ্জের লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, “শিমুল ফুল না ফুটলে যেন বসন্ত আসে না। বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, এবং বসন্ত এলেই শিমুলের কথা চলে আসে।” তিনি আরও বলেন, “এটি আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের দায়িত্ব এই শিমুল গাছগুলোকে রক্ষা করা এবং এর সৌন্দর্য ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা।”

এভাবে, কমলগঞ্জের প্রকৃতিতে শিমুল গাছের সংখ্যা কমে গেলেও, এর সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য এখনও মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে রচিত রয়েছে।