
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ:
মানিকগঞ্জের ঘিওরে তেরশ্রী কালী নারায়ণ ইনষ্টিটিউশনের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে লটারির ড্র’কে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ, ৬শ’ চেয়ার ও মঞ্চ ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধরা। হট্টগোলে পণ্ড হয়ে যায় অনুষ্ঠানের র্যাফেল ড্র ও কনসার্ট। এ নিয়ে আয়োজক কমিটি ও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন। যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকায় এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
ইনষ্টিটিউশনের মাঠে দুই দিনব্যাপী শতবর্ষ পালনের সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল গত রবিবার। এদিন আলোচনা ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও ছিল র্যাফেল ড্র’র পুরষ্কার বিতরণ পর্ব। গত রবিবার রাত বারোটার দিকে র্যাফেল ড্র’র লটারি বিজয়ী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় বিক্ষুদ্ধদের সাথে স্থানীয় একটি গ্রুপের লোকজন মিলিত হয়ে আকষ্মিক হামলা চালায়। লটারি আয়োজকদের খুঁজে না পেয়ে অনুষ্ঠানের সাজানো মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে উত্তেজিত লোকজন। হৈ-হুল্লো আর দৌড়াদৌড়িতে পদদলিত হয়ে ২ ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক শিক্ষার্থী থেকে ১ হাজার, বর্তমান অধ্যয়নরতদের ৪ শত পরিবারের সদস্যদের ৫ শত টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফি নেয়া হয়। মোট ৩২০০ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেন। শিক্ষার্থী ছাড়াও আশেপাশের এলাকায় মাইকিং করে ৫০ টাকা মূল্যমানের র্যাফেল ড্র’র লটারি বিক্রি করা হয় ১২ হাজার। এই কূপনে পুরস্কার হিসেবে মোটরসাইকেল, ল্যাপটপ, রেফ্রিজারেটর, স্মার্টফোন, মাইক্রোওভেন দেয়ায় ঘোষণা দেয়।
ডেকোরেটর মালিক আমিনুর রহমান জানায়, সোমবার রাতে র্যাফেল ড্র’কে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধরা মঞ্চে থাকা ৬শ’ চেয়ার ও মঞ্চ ভাংচুর করে। এতে আমার প্রায় ৪ লক্ষটাকার ক্ষতি হয়।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা সাত্তার প্রধান বলেন, অনুষ্ঠান উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের গেঞ্জি, টুপি, স্মরণিকা ও দুপুরের লাঞ্চ প্যাাকেট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এসব উপকরণ ও খাবার পায়নি।
অপর শিক্ষার্থী আলী হোসেন ভূইয়া বলেন, স্মরণিকায় আমার নাম সুমি ভূইয়া নামে ভুল ছাপা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও পাননি দুপুরের খাবার। এসব নানা কারনে প্রথম দিন থেকেই বিক্ষুদ্ধ ছিল শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার বাদী হয়ে ঘিওর থানা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কিছু না বলে কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলতে বলেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন আয়োজক কমিটির ব্যর্থতার কারণে অনুষ্ঠান সফল হয়নি। অনুষ্ঠানস্থলে ভাংচুরের ঘটনায় আমার নামে যদি কেউ অভিযোগ করে থাকেন, তাহলে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, সামান্য ভুল বোঝার কারণে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। অনুষ্ঠান বানচাল করার লক্ষ্যে এটি পূর্ব পরিকল্পিত হামলা উল্লেখ করে তিনি বলেন থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। অচিরেই দোষীদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. জাকির হোসেন জানান, হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, র্যাফেল ড্র এর পুরস্কার প্রদান না করা ও স্থানীয় কয়েকজনকে আমন্ত্রণ না দেয়ায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য এই অনুষ্ঠান গত শুক্রবার ভার্চুয়ালী উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। উপস্থিত ছিলেন, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ নাঈমুর রহমান দূর্জয়, বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ ড. জাফর ইকবাল, আইন কমিশনের সচিব আতাউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম রাজা, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন নাহার, আ:লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মৃধা প্রমুখ।