
নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি, শেরপুর:
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় চুরির অপবাদে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বাবা-ছেলেকে মারধরের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত বিচার ও সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যানের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার ভটপুর গ্রামে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগীর চাচা লাল মিয়া।
লিখিত বক্তব্যে লাল মিয়া জানান, উপজেলার ভটপুর গ্রামের আমিনুল ইসলামের বাড়ি থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় তারা প্রতিবেশী কিশোর মোশারফকে (১৭) সন্দেহ করেন। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারী ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান দুপুরের দিকে কিশোরকে ধরে নিয়ে পাশের সিধূলী গ্রামে জয়নাল আবদীনের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমানসহ স্থানীয় কয়েকজন কিশোরকে বেঁধে মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে ভয় দেখিয়ে টাকা চুরির কথা স্বীকার করিয়ে তা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়।এরপর ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পাশের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোজাম্মেলকে ঘটনাস্থলে ডেকে আনা হয়। পরে কিশোরের বাবা চাঁন মিয়াকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তাঁকেও মারধর করা হয়। এরপর বাবা-ছেলেকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই কিশোরের চাচা লাল মিয়াকেও ডেকে আনা হয়। সেখানে নিয়ে ভাই-ভাতিজাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লাল মিয়ার জমির গ্রাম্য দলিল ইউপি সদস্যদের হাতে জিম্মা রেখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে এ ঘটনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারী লাল মিয়া বাদী হয়ে দুই ইউপি সদস্যসহ সাত জনের বিরুদ্ধে শেরপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে চুরির অভিযুক্তকে বাঁচাতে ইউপি সদ্স্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে দাবী করে ১৯ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেন নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। তিনি জানান, মোশারফ চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাড়ির মালিক তাঁকে ধাওয়া করেন। এসময় মোশারফ ৬ হাজার ৩০০ টাকা ফেলে রেখে চলে যান৷ পরে ঘটনার ৪ দিন পর গ্রাম পুলিশের সাহায্যে মোশারফকে ডেকে এনে ইউপি সদস্য হাবিবুরের কাছে সোপর্দ কিরা হয়। পরে তাঁকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে চাচা লাল মিয়ার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ইউপি চেয়ারম্যানের এই সংবাদ সম্মেলনকে মিথ্যাচার দাবী করে ভুক্তভোগী কিশোরের পিতা চাঁন মিয়া বলেন, আমার ছেলে ও আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেন ইউপি সদস্য হাবিবুর ও মোজাম্মেল। পরে আমার ভাইয়ের জমির কাগজ নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়। পরে চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চাইলে তিনিই আমাদেরকে মামলা করতে বলেন এবং সহযোগীতার কথা জানান। কিন্তু তিনিই এখন মিথ্যাচার করছেন। আমরা দোষীদের বিচার চাই।
ভুক্তভোগী কিশোর বলেন, ‘আমি টাকা চুরি করি নাই। সন্দেহ করে আমাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে বেঁধে মারধর করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে ভিডিও করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত চাচার জমির দাম ধরে গ্রাম্য দলিল করেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ইউপি সদস্যরা বিচার করতে গিয়েছিল। সেখানে কাউকে মারধর করা হয়নি। ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। দ্রুত আমরাও আইনী পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা দায়েরের পর আদালত থেকে মামলা এজাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।