
মেলান্দহ সংবাদদাতা:
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় তিন ফসলি কৃষিজমিতে চলছে পুকুর খননের হিড়িক। সরকারি স্থাপনা নির্মাণ এবং অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে উপজেলায় দ্রুত কমে যাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে মেলান্দহে তিন ফসলি জমি কমেছে প্রায় ৪১.৯৮ হেক্টর। যদিও জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা অনুসারে, কৃষিজমির প্রকৃতি পরিবর্তনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি বাধ্যতামূলক—তবুও উপজেলা জুড়ে চলছে নিয়মবহির্ভূত পুকুর খননের মহোৎসব।
উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের মানিক এলাকায় তিন ফসলি জমিতে সম্প্রতি একসঙ্গে ৯টি পুকুর খনন করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার নেতৃত্বে এসব পুকুর খননের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা গণমাধ্যম ও প্রশাসনকে জানালেও এখনো পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা।
পুকুর মালিক বাচ্চু মিয়া জানান, “আগে ধান চাষ করতাম। আশপাশে অনেকেই পুকুর করছে, তাই আমিও করেছি। মাছ চাষ করব, মাটি বিক্রি করেছি। সব কাগজপত্র আমাদের আছে।”
ইউপি সদস্য সোহেল মিয়াও দাবি করেন, “আমরা ইউএনও অফিসে আবেদন দিয়েছিলাম। প্রায় ২০ দিন ধরে মাটি কাটা হচ্ছে। জমির মালিকরাই এই খনন করছেন।”
তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এসব পুকুরের উঁচু পাড়ের কারণে নিচু জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে আশপাশের চাষিরাও জমি কেটে পুকুর বানাতে বাধ্য হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, এসব জমিতে মূলত ধান, সরিষা ও পাট চাষ হতো। বিশেষ করে ধান চাষে মেলান্দহ উপজেলার সুনাম রয়েছে। কৃষিজমি কমে যাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আল ফয়সাল বলেন, “অনুমতি ছাড়া কৃষিজমিতে পুকুর খনন করা আইনত দণ্ডনীয়। কেউ যদি অনুমতি না নেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মেলান্দহ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনীম জাহান বলেন, “জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে। কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুমী আক্তার জানান, “এই বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”