
‘স্যার, আন্নেরা আঙ্গরে স্কুল আঙ্গরে ফিরিয়ে দিন। যমুনা নদীভাঙনের সময় আঙ্গরে স্কুল দক্ষিণ চিনাডুলি গ্রামে নিয়ে গেছে। সেখানে এহন ওই স্কুল দরকার নাই। অথচ এহন আঙ্গরে বাড়ির কাছে কোনো স্কুল নাই। আমরা স্কুলের অভাবে পড়তে পারছি না। আমরা পড়তে চাই।’
এভাবেই নিজেদের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্কুল ফেরত চেয়েছে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের উত্তর জোরডোবা গ্রামের তিন শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
জানা গেছে, প্রায় বিশ বছর আগে যমুনা নদীভাঙনে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায় উত্তর জোরডোবা গ্রামটি। তখন উত্তর জোরডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ চিনাডুলি গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ ১৫ বছর নদীভাঙন ও চর জাগার প্রক্রিয়ায় যমুনার বুক জেগে উঠে নতুন চর। সেই চরেই উত্তর জোরডোবা এলাকা আবার পূর্বের রূপ ফিরে পায়। এখন সেখানে পাঁচ শতাধিক বসতভিটা গড়ে উঠেছে।
তবে নতুন করে গ্রাম গড়ে উঠলেও প্রাথমিক শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তিন শতাধিক শিশুর পড়াশোনা হুমকির মুখে পড়েছে। শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে এলাকাবাসী পুরনো বিদ্যালয়টি আবার উত্তর জোরডোবায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
এলাকাবাসীর দাবির মুখে দুপুরে উত্তর জোরডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ও পুরনো অবস্থান পরিদর্শন করেন ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন। তার সফরসঙ্গী ছিলেন ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও কান্দারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান চৌধুরী, কুমিরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজম আলী এবং উত্তর জোরডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামিউল ইসলাম শামীম।
বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে উত্তর জোরডোবা গ্রামে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সমাজসেবক নায়েব আলী নবাবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাপধরী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম মণ্ডল, সাপধরী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিল্লুর রহমান এবং সাপধরী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক আজিজুর রহমান চৌধুরী।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মো. মুসলিম উদ্দিন আকন্দ, আব্দুল আজিজসহ স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, উত্তর জোরডোবা গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া রোধে বিদ্যালয়টি দক্ষিণ চিনাডুলি গ্রাম থেকে স্থানান্তর করে পুনরায় উত্তর জোরডোবা গ্রামে স্থাপনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে।