Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’

November 14, 2022 06:00:38 AM   স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’

বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ২৩৩ রেকর্ড করা হয়েছে, যা বাতাসের মানকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলে নির্দেশ করে। পাকিস্তানের লাহোর ৩৬০ একিউআই স্কোর নিয়ে শীর্ষস্থান এবং ভারতের রাজধানী দিল্লি ১৯২ স্কোর নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। গত কয়েকদিন ঢাকার দূষণ কিছুটা কম থাকলেও এদিন দূষণ অনেক বেশি রয়েছিল। 

সাধারণত ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে একিউআই স্কোর ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ বলা হয়। তবে কিছু মানুষের জন্য তা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে যারা বায়ু দূষণের প্রতি অস্বাভাবিকভাবে সংবেদনশীল। এই সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে কর হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার এই দূষণের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। শুষ্ক মৌসুম এলেই বেড়ে যায় এই শহরের দূষণের মাত্রা। সরকারি নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে এই মাত্রার পরিমাণ। এর আগে দেশব্যাপী বায়ুমান পরীক্ষা করে গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছিল স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র-ক্যাপস। গাজীপুরের পর ঢাকা দ্বিতীয় এবং নারায়ণগঞ্জ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বলে উঠে এসেছে তাদের গবেষণায়। ক্যাপসের পরিচালক ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের গবেষণার তথ্য তুলে ধরেছিলেন। 

বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণত ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫-কে ঢাকায় দূষণের জন্য বেশি দায়ী করা হয়। ক্ষতিকর ছয় ধরনের পদার্থের মধ্যে প্রথমেই আছে পিএম (পার্টিকুলেটেড ম্যাটার) ২.৫ অথবা ২ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রাম সাইজের ক্ষুদ্র কণা। এরপর পিএম-১০ সবচেয়ে বেশি। বাকি চারটির মধ্যে আছে সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড এবং সিসা। এই ছয় পদার্থ ও গ্যাসের ভগ্নাংশ গড় করেই বায়ুর সূচক নির্ধারণ করা হয়। সেই সূচককে বলা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স।

বিশ্বে প্রতি বছর ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু:
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বায়ুদূষণ। এ কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিতও হয়েছে তাদের গবেষণা প্রবন্ধটি। প্রবন্ধটিতে বলা হয়, বাতাসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতির কারণে সৃষ্ট দূষণ আর এতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয় অন্তত ৬৭ লাখ মানুষের। বাতাসে কার্বন ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণার মিশ্রণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে গবেষণায় বলা হয়। দূষণের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে, শ্বাসতন্ত্রের রোগে এবং ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলেও গবেষণায় তুলে ধরা হয়।

বায়ুতে আনুবিক্ষণিক বস্তুকণার উপস্থিতিতে যে দূষণ ঘটে, তাকে বলা হয় ফাইন পল্যুশন পার্টিক্যালস টু পয়েন্ট ফাইভ, বা পিএম ২.৫। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, পিএম ২.৫ দূষণজনিত কারণে প্রতি বছর বিশ্বে মৃত্যু হয় ৪২ লাখেরও বেশি মানুষের। তবে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। নানা কারণে বায়ুদূষণ ঘটে, যার অনেকটাই আবার মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই। মরুভূমি অঞ্চলে ধুলিঝড় এবং অরণ্যে বা ঘাসে আগুন লাগার ফলে নির্গত ধোঁয়া বাতাসে রাসায়নিক ও ধুলিকণাজনিত দূষণ ঘটিয়ে থাকে। ক্ষতিকারক পদার্থ বাতাসে মেশার ফলে বায়ুদূষণ হয়। বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্যরে ক্ষতি হয় এবং পরিবেশ ও সম্পদও নষ্ট হয়। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে জলবায়ুর ওপর এবং তা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনেরও কারণ হয়।