Date: May 06, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / শিক্ষাঙ্গন / ধর্ষণের বিরুদ্ধে কুবিতে মানববন্ধন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

ধর্ষণের বিরুদ্ধে কুবিতে মানববন্ধন

March 09, 2025 07:35:36 PM   অনলাইন ডেস্ক
ধর্ষণের বিরুদ্ধে কুবিতে মানববন্ধন

 

কুবি প্রতিনিধি:
সারাদেশের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও (কুবি) ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৯ মার্চ) বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারুফ শেখ এবং আরাফ ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় এ মানববন্ধনে শিক্ষকরাও সংহতি প্রকাশ করেন। বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শীলা, সহযোগী অধ্যাপক ড. নাহিদা বেগম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসানসহ অন্যান্য শিক্ষকরাও এসময় উপস্থিত ছিলেন।

"দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত", "ধর্ষকের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না", "একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর", "আবু সাঈদের বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই", "চব্বিশের বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই"—এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে মানববন্ধনস্থল।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী জুলফা আক্তার বলেন, "আমরা সবাই আছিয়ার ধর্ষণের কাহিনি জানি। এমন অনেক ধর্ষণ হয় যার খবর আমরা জানি না। অনেকে ভয়ে প্রকাশও করে না। ধর্ষণ বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া। ১০-২০ হাজার টাকা দিয়ে, হুমকি-ধমকি দিয়ে তারা আবার মুক্ত আকাশের নিচে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের দাবি, ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক, প্রকাশ্যে ফাঁসি কার্যকর করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ধর্ষণের কথা চিন্তাও না করতে পারে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মিলে ধর্ষকদের প্রতিহত করতে হবে।"

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জোহরা মীম বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গাতেও এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের মানসিকতা অত্যন্ত নিচু। তারা নারীদের বিভিন্নভাবে বুলিং করে। আমাদের চারপাশে এমন অনেকে আছে, যারা ভেতরে একরকম আর বাইরে আরেকরকম। প্রশাসনের উচিত এ ধরনের মানুষকে চিহ্নিত করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ধর্ষক হিসেবে গড়ে না ওঠে। প্রশাসন এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক, যাতে নারীদের নিয়ে কটূক্তি করার আগেই অপরাধীদের ভয় সৃষ্টি হয়।"

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শীলা বলেন, "গভীর শোক ও প্রতিবাদের ভাষাকে একত্র করতে আমরা আজ এখানে জড়ো হয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি নারীদের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এখন একটি নারী-শিশুও ধর্ষকের হাত থেকে নিরাপদ নয়। ছোট্ট শিশু আছিয়ার জীবনকে বোঝার আগেই তার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে ধর্ষকেরা।"

তিনি আরও বলেন, "মোরাল পুলিশিংয়ের নামে যে নারী হেনস্তা করা হয়, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এই সহিংসতার অবসান চাই। সহিংসতামুক্ত, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই।"

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান বলেন, "ধর্ষণই একমাত্র অপরাধ যেখানে ভুক্তভোগীকেই তার নির্দোষতা প্রমাণ করতে হয়। ধর্ষকরা আমাদের চারপাশেই লুকিয়ে থাকে। তাই ছোটবেলা থেকেই নারীদের সচেতন করতে হবে, শেখাতে হবে কোনটা ‘গুড টাচ’ আর কোনটা ‘ব্যাড টাচ’। এখন দেশে ধর্ষণের যে মহামারী চলছে, অনেকেই বলছে এটি নারীদের বেপর্দার কারণে হচ্ছে। পর্দার বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই রয়েছে। তাই দ্রুততম সময়ে ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে ধর্ষকমুক্ত করতে হবে।"

নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন বলেন, "দেশব্যাপী নারীদের প্রতি যে সহিংসতা চলছে, তার প্রতিবাদেই আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। প্রতিবাদ করলেই যদি সমস্যা সমাধান হতো, তাহলে হয়তো আমাদের এখানে দাঁড়াতে হতো না। এর মানে হলো, আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ কেউই নিরাপদ নয়।"

কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।