
আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই। সাহিত্যের পাশাপাশি ইতিহাস বিষয়েও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষণাসহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় নতুনভাবে সংযোজিত হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদসহ বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামের শহীদদের স্মরণ করে নতুন লেখা যুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বইয়ের সংস্করণ:
এবার প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ৬৪ লাখ, আর মাধ্যমিক স্তরের (মাদ্রাসার ইবতেদায়ি সহ) মোট বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখ। সরকারের এক যুগ আগে তৈরি পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য এনসিটিবি ৪১ বিশেষজ্ঞ দিয়ে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছে। এতে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন এবং কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস, কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে জায়গা পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং কিছু নতুন গল্প-কবিতা।
স্বাধীনতার ঘোষণার নতুন বিবরণ:
পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের নতুন অধ্যায়ে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক অংশে প্রথমবারের মতো মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এবং জাতীয় চার নেতার ছবি স্থান পেয়েছে। পুরোনো বইয়ে এসব নেতার ছবি ছিল তবে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন বইয়ে ‘পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা’ শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে, “পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৬শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার পুনঃঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।”
অন্যদিকে, পুরোনো বইয়ে এই অংশে লেখা ছিল, “...পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।”
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান:
এবার ইতিহাসের বইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয় যুক্ত করা হয়নি, তবে বাংলা এবং ইংরেজি বইয়ে এটি স্থান পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য নায়কদেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা আগে উপেক্ষিত ছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণার পাশাপাশি, এবার তাঁদের অবদান সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
নতুন পাঠ্যবইয়ে আরও কিছু বিষয় পরিবর্তন:
চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবির পাশাপাশি মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার ছবি যুক্ত করা হয়েছে। পূর্বের বইয়ে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি ছিল।
এছাড়া, বইয়ের শেষ অংশে জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতের বিষয়ে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।
নতুন বইয়ে ছয়টি নতুন প্রবন্ধ, কবিতা বা ছড়া যুক্ত করা হয়েছে। ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক প্রবন্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবিসহ তাঁদের স্মরণ করা হয়েছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, “জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিষয়গুলোর স্থান পাওয়ার জন্য একটি গণদাবি ছিল। এবার ইতিহাসের বইয়ে না দিয়ে বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য নায়কদের অবহেলা না করে, তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা পাঠ্যবইকে রাজনৈতিক দলের প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বন্ধ করেছি।”