
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জে আর্ত মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এক হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী রাহুলের একমাত্র স্বপ্ন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সাফল্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। সেই সাথে নিজেকে জনকল্যাণমূলক কাজে আরো বেশি সম্পৃক্ততার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা অবহিত করা ও বাস্তবায়নের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
জানা যায়, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন তরুণ এ প্রতিভাবান যুবককের পুরো নাম ধনরঞ্জন বিশ্বাস রাহুল। পিতা-মৃত সত্যেন্দ্র বিশ্বাস, মাতা- সুধারানী বিশ্বাস, গ্রামের নাম খয়রৎহাটি, ডাকঘর -গুজাদিয়া, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রতিবন্ধী রাহুল সাংবাদিকদের জানান, দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় হঠাৎ তার দরিদ্র বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই সংসার জীবন চালাতে তার পরিবারে অভাব অনটন দেখা দেয়। তাই তার কাকা ও আত্মীয় স্বজনের সাহায্য সে কয়েক বছর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে তার একজন আত্মীয়ের সহায়তায় একটি ডাক্তারি ফার্মিসিতে কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। এভাবে কিছুদিন লেখাপড়া বন্ধ থাকার পর তার মা তাকে আবার লেখাপড়া শুরু করতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় সে এসএসসি পাস করে করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ছাত্র জীবনে ক্রিকেট খেলায় তার প্রচণ্ড আগ্রহ থাকায় তিনি বিকেএসপি মাঠে প্রতিবন্ধী ক্যাটাগরিতে দুইবার ভালো খেলার নৈপুণ্যে দেখিয়েও কতৃপক্ষের স্বজনপ্রীতির কারণে তাকে চূড়ান্ত পর্যায়ের তালিকাভুক্ত থেকে বাদ পড়ে যান।
তিনি আরও জানান, তার কাছে যখনই টাকা হয়েছে বা কোথাও থেকে সাহায্য পেয়েছে, তখনই সেসব টাকা সে গরীব দুঃখী মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে বিগত করুণা মহামারীর সময় দরিদ্র পরিবারে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা, মাস্ক বিতরণ, জীবাণু নাশক বিতরন ও জনসচেতনতা বাড়াতে মাইকিং এর ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজে নিজের উপার্জিত টাকায় ব্যয় করেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলের কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ সারোয়ার মোর্শেদ চৌধুরী এর মাধ্যমে পনের হাজার তিনশত টাকা জমা দিয়েছি। এমনকি জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন উৎস থেকে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির টাকাগুলোও তিনি নিজের জন্য না রেখে প্রতিবন্ধীদের উপকারে অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি । এমনিভাবে গত ২০২০ সালে মহমারীর সময় চল্লিশটি পরিবারের মাঝে খাবারের ব্যবস্থা করেন।
এছাড়াও গত শারদীয় দূর্গা পূজার সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরও অনুরূপ সহযোগিতা প্রদান করেন। পরবর্তী পর্যায়ে গত ডিসেম্বর মাসে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শীতবস্ত্র ও হুইল চেয়ার বিতরণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। ২০২১ সালের প্রথম দিকে তিনি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য সীমিত পরিসরে একটি লাইব্রেরি চালু করেন এবং পরবর্তীতে কয়েকজন বন্ধু মিলে আরো একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বিদ্যালয়টির নাম দেন ‘করিমগঞ্জ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’। এমনি জনসেবামূলক কাজের নেশায় তার অর্থসম্পদ না থাকা সত্ত্বেও গরিব অনাথ প্রতিবন্ধীদের পড়ালেখার খরচ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান এখনো কষ্ট করে চালিয়ে যাচ্ছেন।
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে রাহুল জানান, আমি প্রতিবন্ধী হলেও সব শ্রেণীর মানুষের জন্য কিছু করতে চাই ।আমি আমার আয়ের ৫০ শতাংশ টাকা প্রতিবন্ধী, অসহায় ও গরিবদের মাঝে বিতরণ করতে চাই। তিনি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চান। বছরে অন্তত দুই শতাধিক প্রতিবন্ধী পরিবারের সাবিক দেখভালের দায়িত্ব নিতে চান। সার্বিকভাবে তিনি সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সেবা করতে চান । বিধবা নারীদেরকে স্বাবলম্বী করতে চান।
তিনি আরো জানান, তার হাতে এখন অর্থ নেই, তাই তিনি বিভিন্ন সময় খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে প্রতিবন্ধী হিসেবে যেসব পুরস্কার পেয়েছেন,সেগুলো নিলামে বিক্রি করে গরীব প্রতিবন্ধী ও অসহায় মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিতে চান ।এ জন্য তিনি দেশের বিত্তবানদের ওই নিলামে অংশগ্রহণ করে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন ও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করেন । এতে এক দিকে তার মায়ের ইচ্ছাও পূরণ হবে, অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে নিজেকে কিছুটা হলেও সম্পৃক্ত করতে পারবেন। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে শিঘ্রই সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেছেন মানবতার ওই ফেরিওয়ালা রাহুল।