
স্টাফ রিপোর্টার:
যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হচ্ছে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুযযামান মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নীর ১২তম মহাপ্রয়াণ দিবস। ১৬ জানুয়ারি সারাদেশে হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নী ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি ইহলোক ত্যাগ করেন। মহাপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষে তার স্মরণে সারাদেশে হেযবুত তওহীদ কর্তৃক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল এবং অসহায়, দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য ও শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নী উপমহাদেশের প্রখ্যাত পন্নী পরিবারের উত্তরসূরি, বিশিষ্ট ইসলামি দার্শনিক, চিন্তাবিদ, সংগঠক, সমাজ বিপ্লবী, আলোড়ন সৃষ্টিকারী বহু গ্রন্থের লেখক, রাজনীতিবিদ, শিকারি, উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মিলনায়তনে আলোচনা ও দোয়ায় মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় এমামুযযামানের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশে হেযবুত তওহীদের প্রায় প্রতিটি জেলা শাখা অনুষ্ঠানের সাথে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়।
হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগের আমীর ডা. মাহফুজ আলম মাহফুজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন- তিনি একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ ছিলেন যার আগমনে পৃথিবীতে বিরাজিত অন্ধকার দূর হয়ে আলোকবর্তিকা ফিরে পেয়েছে। মানুষ যখন হতাশায় নিমজ্জিত, পথহারা, দিশেহারা, হাজারও ফেরকা-মাযহাবে বিভক্ত, পথের দিশা পাচ্ছিল না; ধর্মব্যবসা উগ্রবাদীদের আস্ফালনে সমাজ অন্ধকারাচ্ছন্ন ঠিক এমন একটি মুহূর্তে আলোকবর্তিকা ও হেদায়াতের বাণী নিয়ে আবির্ভূত হন যামানার এমাম এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নী। তিনি এমন একজন মহাপুরুষ ছিলেন যাঁর জীবনে একটা মিথ্যা কথা বলার রেকর্ড নেই, নৈতিক স্খলনের নজির নেই। যিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজে রোজকার করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তাঁর মত একজন মহামানবের আগমনে মানবজাতি ধন্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান হতাশাগ্রস্ত মানবজাতির উত্থান ঘটাতে হলে জনাব মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নী কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাবনার উপর ঐকমত্য হবার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মানবতা প্রতিষ্ঠায় তাঁর সংগ্রামী জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন, তাঁর সহধর্মিণী হেযবুত তওহীদের প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, তার কনিষ্ঠ কন্যা হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, তার জ্যেষ্ঠ কন্যা হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উম্মুত তিজান মাখদুমা পন্নী, হেযবুত তওহীদের আন্তর্জাতিক প্রচার বিভাগের সম্পাদক মশিউর রহমান, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদুল হাসান প্রমুখ। স্মৃতিবিজরিত বিভিন্ন ঘটনা রমন্থনের সময় উপস্থিত সকলে আবেগ আপ্লুত হয় পড়েন।
এদিন ঢাকার বিভিন্ন শাখাসহ দেশের প্রতিটি থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এই মহামানবের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা তাঁর সংগ্রামী জীবন ও কর্ম এবং আজীবন মিথ্যা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার নৈতিক অবস্থান ও উন্নত ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর আদর্শকে বুকে ধারণ করে বর্তমান প্রতারণামূলক বিশ্বব্যবস্থার বিপরীতে তাঁর প্রস্তাবিত ব্যবস্থা ও তাঁর তুলে ধরা প্রকৃত ইসলামের রূপরেখা প্রতিষ্ঠায় জীবন ও সম্পদ দিয়ে আজীবন সংগ্রাম করার অঙ্গীকার করেন তারা।
সবশেষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিলে এই মহামানবকে আল্লার নৈকট্য ও সান্নিধ্য দান এবং জান্নাতের উচ্চ মাকামে অধিষ্ঠানের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উল্লেখ্য, মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী তাঁর লেখনীতে, বক্তব্যে একদা লৌককঠিন ঐক্যবদ্ধ, দুর্বার, দুর্বিণীত, সভ্য শ্রেষ্ঠ জাতি কীভাবে কি কারণে আজকে হাজার হাজার ফেরকা মাযহাবে বিভক্ত হয়ে নিজেরা অধঃপতিত গোলাম জাতিতে পরিণত হলো? এর প্রকৃত কারণ কি? তা তুলে ধরেছেন। এর থেকে মুক্তির পথ আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা তওহীদভিত্তিক সত্য দীন প্রতিষ্ঠা করা এবং জাতিকে সব রকম ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক তিনি দিয়েছেন। এবং সেই রূপরেখাও তুলে ধরেছেন।
তিনি ছিলেন একজন বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী ভার্সাটাইল জিনিয়াস। তার রচিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ ‘এ ইসলাম ইসলামই নয়’ ‘দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা!’, ‘দ্যা লস্ট ইসলাম’সহ বহু গ্রন্থ ব্যাপক সারা জাগিয়েছে। পাঠকমহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। ‘দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা!’ বইটি ২০০৮ সালে বাংলাদেশে বেস্ট সেলার বই হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
জঙ্গিবাদ নির্মূলে করণীয় প্রসঙ্গে সরকারকে কার্যকরী প্রস্তাবনা পেশ করেন তিনি। যেটা অব্যর্থ সনদ হিসেবে কার্যকর হয়। সরকার সেটা ঘোষণা না করলেও সরকারের গৃহীত কর্মপন্থার মধ্যে সেটার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে।
তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন হেযবুত তওহীদ সারাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি, মাদক, নারী নির্যাতন ইত্যাদির বিরুদ্ধে সারাদেশে লক্ষ লক্ষ সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখে ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়িয়েছে সংগঠনটি। বর্তমানে হেযবুত তওহীদের শান্তি, ন্যায় ও সত্য দীনের বাণী বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর মাঝেও প্রচারিত হচ্ছে।