
মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা। ১৯৭২ সালে ফিরে আসার পর যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়ে তিনি দেশে দুর্বার গতিতে উন্নয়ন শুরু হয়। যার ফলে এই দেশ এগিয়ে গেছে। যা অন্য কোন দেশের নেতার পক্ষেই সম্ভব ছিলো না। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে পেয়েছেন একটি যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ হিসেবে। সে সময় গোডাউনে কোনো খাবার ছিল না। রাস্তাঘাটি ছিল না। এক কোটি লোক ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। এই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশ জখন এগিয়ে চলছিল তখন তাকে যখন হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালে তাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর থমকে যায় সবকিছু। সে বছর দেশে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.১৩। পরবর্তী বছরই সেটা ৫-৬ এ গিয়েছিল।
বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে নজরুলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিধ্বনি উদ্যোগে ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু চেতনায় নজরুল’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু সাধারণ খেটে খাওয়া শোষিত মানুষের পক্ষে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলে, জাতিসংঘের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুই ভাবে বিভক্ত। একভাগে শোষক অপরভাবে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। আপনারা অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। এই টাকা দিয়ে পৃথীবিতে দারিদ্র বিমোচনের উদ্যোগ নিন, শিশুদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিক্ষাখাতে ব্যয় করা হোক। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন বঙ্গবন্ধ। তিনি বলেন, আমেরিকা কিউবার সাথে পাটচুক্তির বিরোধিতা করায় তারা সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি, কে আমাকে ভিক্ষা দেবে, কে দেবেনা। সেই চিন্তা করে নয়। বাংলাদেশের মানুষ নিজের পায়ে দাড়াবে। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটা জাতি হবে। সে কার সাথে বাণিজ্য করবে আর কার সাথে বাণিজ্য করবে না সিন্ধান্ত বাংলাদেশ নেবে। আমি দুঃখিত আপনারা যে শর্ত দিয়েছেন সে শর্ত আমি মানতে পারছি না।
ফিদেল কাস্ত্রোসহ তৎকালীন বিশ্ব নেতারা বঙ্গবন্ধুকে অনেক সম্মান করতো উল্লেখ করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাক্ষাৎ হয়। সে সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়েজ। বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব। ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইজ দ্য হিমালয়েজ। আই হ্যাভ দাজ হ্যাড দ্য এক্সপিরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়েজ।’ অর্থাৎ, ‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান। এভাবে আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই লাভ করলাম।’
“যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশের কোথায় কি উন্নয়ন হবে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলেন। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে যা যা করতে হবে সবই তিনি শুরু করেছিলেন। কিন্তু পচাত্তরের ঘাতকরা তাকে হত্যার পর সবকিছু থমকে গিয়েছিল। আজ তারই উত্তরাধিকার, তারই রক্ত, সফল রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সরকার প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ভারত থেকে আগত চুরুলিয়া দোলনচাঁপা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও কাজী নজরুল ইসলামের নাতনী সোনালী কাজী, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাড আবদুন নূর দুলাল, দৈনিক দেশেরপত্র এর রুফায়দাহ পন্নী, শিল্পকলা একাডেমীর ড. শাহাদাত হোসেন নিপু।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ আন্তর্জাতিক পরিষদের প্রধান সমন্বয়ককারী কবি আসলাম সানী। সঞ্চলনায় ছিলেন এডভোকেট শিমুল পারভিন। কবিতা আবৃত্তি করেন ল্যাবএইড হাসপাতালের ডা. মমতাজ রহমান, আইনজীবী ও কবি নোমান রহমান, সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ফাতেমাতুজ জোহরা।