গাজীপুর সংবাদদাতা:
বাংলাদেশের এক অসাধারণ প্রতিভা, মেধাবী ছাত্র সাজিদ শাহরিয়ার শুভ্র, উচ্চতর শিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। স্বপ্নপূরণের অদম্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তিনি প্রতিটি পদক্ষেপে প্রমাণ করেছেন অধ্যবসায় ও মনোবলের শক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে তিনি তার সাফল্যের মুকুটে যুক্ত করেছেন নতুন পালক।
আইইউটি (IUT) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর, সাজিদ ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে গাজীপুর থেকে যাত্রা শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্যে। তাকে স্বাগত জানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বার্কলি ও আরভিন, এছাড়াও কলাম্বিয়া, জনস হপকিনস, জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (Georgia Tech), নিউইয়র্ক, মিনেসোটা, নর্থ-ইস্টার্ন, কার্নেগি মেলন, সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন এবং ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১২টি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান।
সাজিদের প্রতিভার ঝলক ছোটবেলা থেকেই ছিল স্পষ্ট। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার পূর্বপাড়া থেকে জন্ম নেওয়া এই কৃতি সন্তান বেড়ে উঠেছেন গাজীপুরের জয়দেবপুরে। তার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা স্কুলের শিক্ষক।
পড়াশোনার পাশাপাশি সাজিদ বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। শর্ট ফিল্ম নির্মাণ, অভিনয়, ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন এবং টিউশনি প্রতিটি ক্ষেত্রে তার নিষ্ঠা ও পরিশ্রম প্রমাণ করে যে, স্বপ্ন কখনও অধরা থাকে না। আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় সংকল্প এবং অধ্যবসায় তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
সাজিদের শিক্ষাজীবন এবং অনুপ্রেরণার গল্পটিও চমকপ্রদ। ক্লাস টু-থ্রিতে পড়ার সময় শাহরুখ খানের হিন্দি সিনেমা ‘কাল হো না হো’-এর একটি দৃশ্যে (ব্রুকলিন ব্রিজের সামনে নায়ককে দাঁড়ানো) মুগ্ধ হয়ে তার মনে এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয় -একদিন তিনিও সেই ব্রিজের সামনে দাঁড়াবেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী এক আত্মীয়ের কথায় সেই স্বপ্ন আরও প্রজ্বলিত হয়।
শিক্ষার ব্যস্ততার মধ্যেও সাজিদ একাধিক শর্ট ফিল্ম তৈরি করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কারও জিতেছে। চলচ্চিত্র নির্মাণে আর্থিক বাধা আসলেও তিনি থেমে থাকেননি; টিউশনি করে তহবিল জোগাড় করে তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। যদিও এটি নিখুঁত ছিল না, তবুও এই প্রচেষ্টা তার জন্য ছিল অসীম আনন্দ এবং সাহসিকতার গল্প।
সাজিদ যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। তার মতে, সিজিপিএ (CGPA) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৩.৭০ বা তার বেশি থাকা বাঞ্ছনীয়। এসওপি (Statement of Purpose) ব্যক্তিগত কোনো গল্পের মাধ্যমে শুরু করা উচিত।
আইইএলটিএস স্কোর গুরুত্বপূর্ণ হলেও, ইংরেজি শেখা মূলত চর্চার বিষয়। এক্ষেত্রে সিনেমা দেখা, বই পড়া বা খেলাধুলার রিপোর্ট শুনে ইংরেজিতে চিন্তা করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
তিনি আরও পরামর্শ দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ থেকেই আগ্রহের বিষয় নিয়ে ভাবা এবং চতুর্থ বর্ষে থিসিসের জন্য উপযুক্ত শিক্ষকের অধীনে কাজ করা উচিত। থিসিস পেপার কোনো জার্নালে প্রকাশ করা, সংশ্লিষ্ট চাকরিতে অভিজ্ঞতা অর্জন, লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট রাখা ও একাডেমিক/সহশিক্ষা সনদপত্র সজ্জিত রাখলে আবেদন আরও শক্তিশালী হয়।
ভিসা প্রাপ্তি ও পড়াশোনার প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও সাজিদের পরামর্শ: পড়াশোনার খরচের উৎস, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার এবং দেশে ফিরে আসার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা জরুরি।
সাজিদের এই যাত্রা কেবল উচ্চশিক্ষার নয়, অনুপ্রেরণারও প্রতীক। তিনি প্রমাণ করেছেন, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অদম্য উদ্যম থাকলে যেকোনো উচ্চতর স্বপ্নও বাস্তব হতে পারে। অধ্যবসায়, মনোবল এবং ইতিবাচক মানসিকতাই যে কাউকে তার স্বপ্নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সাজিদ তারই জীবন্ত উদাহরণ।