
ভেজাল ও লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ উত্পাদন করলে ১০ বছরের জেল বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘ওষুধ আইন, ২০২২’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এটা অনেক বড় আইন। এই আইনে ১০৩টা ধারা রয়েছে। খসড়া আইনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওষুধ প্রশাসন কীভাবে হবে, ওষুধ প্রশাসনের কার্যক্রম কী হবে, ওষুধ প্রশাসন মান কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, এটার একটা এক্সিকিউটিভ বডি থাকবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ওষুধ উত্পাদন, বিক্রয়, মজুত, বিতরণ ইত্যাদির জন্য কীভাবে লাইসেন্স দেবে, ফি কত হবে, লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্যতা কী থাকবে- এগুলো তারা ঠিক করবে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্সে আবার যদি কেউ ভুলত্রুটি করে বা অন্যায় কিছু করে, তাহলে কীভাবে তার লাইসেন্স স্হগিত করা যাবে সেটাও এই আইনে উল্লেখ করা আছে। কেউ যদি তার লাইসেন্সের বাইরে কিছু উত্পাদন করে তাহলে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে সেগুলোও উল্লেখ করা আছে। তিনি বলেন, ‘ড্রাগ অর্ডিন্যান্স ১৯৮২’ আর ১৯৪০ সালের ড্রাগ অ্যাক্ট একত্র করে এখন এটা আপগ্রেড করা হলো। আর ১৯৮৪ সালের ওষুধ নীতিমালা একটা বড় গাইডলাইন হিসেবে কাজ করেছে। এই আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ছাড়াই যদি কিছু করে তাহলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। কোনো প্রতিষ্ঠান প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিক্রির জন্য ওষুধ মজুত করতে পারবে না। তিনি বলেন, সরকারি ওষুধ, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ এগুলো কোনোভাবেই যেন আর্থিক লেনদেনের মধ্যে না আসে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ওষুধ আমদানি করা যাবে না। কেউ আনতে পারবে না কোনো রকম ওষুধ।
খসড়া আইনে বড় ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘খসড়া আইনে ৫৪ থেকে ৭৫ ধারা পর্যন্ত প্রায় ২২টা ধারাতে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এগুলো একটা পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে যে এতগুলো ধারাতে শাস্তি না দিয়ে এটাকে গ্রুপ করে অল্প কয়েকটাতে আনা যায় কি না। এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লাইসেন্স ছাড়া কেউ যদি ওষুধ আমদানি করে তাহলে তার ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। যদি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ উত্পাদন, রপ্তানি, বিক্রয়, বিতরণ, মজুত অথবা প্রদর্শন করে তাহলে তাকেও একই শাস্তি পেতে হবে। ভেজাল ওষুধ উত্পাদন, বিক্রয়, মজুত করলেও ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ১০ বছরের জেল। সরকারি ওষুধ চুরি করে যদি কেউ বিক্রি করে তাহলে তারও ১০ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা হবে বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলা সদরে একটা করে আদালত থাকবে। ড্রাগ অথরিটি তদন্ত করবে।