
‘তুমি অবিচল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তুমি ধূমকেতু/ পৃথিবী তাকিয়ে রয়/ মাথা নোয়াবার নয়/ বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ, তুমি দিলে পদ্মা সেতু/।’ সেতু মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে ‘পদ্মা সেতু’ নামে এই থিম সংটি তৈরি করা হয়েছে। গত ১২ জুন সরেজমিন পদ্মা সেতু এলাকা পরিদর্শনকালে মুন্সিগঞ্জ মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর খুব কাছ থেকে পানির ঢেউ এবং বাতাসের শব্দের সঙ্গে সাউন্ডবক্স থেকে গানের কথাগুলো ভেসে আসছিল। দূর থেকে একজনকে দেখা যাচ্ছিল গিটার হাতে গান গাইছে। মনে হচ্ছিল, কোনো ছবির শুটিং হচ্ছে। প্রায় ৩ মিনিটে পায়ে হেঁটে সামনে গিয়ে দেখা যায়, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার গিটার বাজিয়ে একটি গানের ভিডিওচিত্রের সঙ্গে ঠোঁট মেলাচ্ছেন। মূলত ‘পদ্মা সেতু’ নামে থিম সংয়ের ভিডিওচিত্রের শুটিং ছিল এটি।
আর মাত্র পাঁচ দিন পর পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, যার মধ্যে বাঙালি জাতির অহংকার ও গর্ব জড়িয়ে আছে। জমকালো উদ্বোধনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চলছে বিপুল তোড়জোড়। তারই একটি অংশ বিশেষ ‘পদ্মা সেতু’ নামের এই থিম সং। গানটির গীতিকার কবির বকুল। সুর করেছেন কিশোর। আর এটি নির্মাণ করছেন কামরুল হাসান ইমরান। এ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, রফিকুল আলম, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কুমার বিশ্বজিৎ, বাপ্পা মজুমদার ও মমতাজ। পাশাপাশি রয়েছেন এ প্রজন্মের কণা, কিশোর, ইমরান ও নিশীতার কণ্ঠও। গানটির রেকর্ডিং শেষ করার পর ১২ জুন পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ভিডিও ধারণ করা হয়। আগামী ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্ধোধন করার পর থিম সংটি বাজবে। এটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিও ও ভিডিও আকারে প্রচার করা হবে। আর যেন তর সইছে না পদ্মা পাড়ি দেওয়া মানুষের। যুগের পর যুগ খরস্রোতা পদ্মার সঙ্গে লড়াই করে পার হওয়া মানুষ এবার স্বপ্ন দেখছে নতুন দিনের। এদিকে স্বপ্ন সংযোগের সব কাজ প্রায় শেষ। দৃষ্টিসীমা যত দূরে যায় ততটুকুই যেন স্বপ্নের বুনন। এদিকে, প্রকৌশলীদের সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর সড়কপথ একেবারেই প্রস্তুত। উদ্বোধনকে ঘিরে বাকি থাকা ছোটখাটো কাজগুলোর দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। আগামী ২২ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দেবে। মূল সেতুর কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। নদীশাসন কাজের ঠিকাদার চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য বানানো হচ্ছে পদ্মা সেতুর টেরাকোটা। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিথিদের দেওয়া হবে নান্দনিক এই উপহার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যাদেশ পাওয়ার পর ব্যস্ত সময় পার করছেন শরীয়তপুরের কার্ত্তিকপুরের মৃৎ শিল্পীরা। জানা গেছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে শরীয়তপুরে ২৫ জুন থেকে তিন দিনের বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। জেলা সদরের বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, কণ্ঠশিল্পীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। ঐ অনুষ্ঠানে ভিডিওচিত্রে দেখানো হবে পদ্মা সেতু নির্মাণের আদ্যোপান্ত। সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রাসহ নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে। রাতে আতশবাজি, ফানুষ ওড়ানো ও লেজার শো হবে। সারা শহরের সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে আলোকসজ্জা করা হবে।
এছাড়া মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্মরণীয় করে রাখতে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপহার হিসেবে দেওয়া হবে পদ্মা সেতুর ছবিসংবলিত সিল্কের টাই, বিভিন্ন রঙের চাবির রিং, পেপার ওয়েট ও মোবাইল ওয়ালেট। সেতুর ছবিসংবলিত মাস্ক কেনা হয়েছে। আর প্রকল্পের পক্ষ থেকে অতিথিদের দেওয়া হবে মেটাল কোট পিন। অনুষ্ঠান সফল করতে সেতু বিভাগের ১৮টি উপ-কমিটি দিনরাত কাজ করছে।