Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / আন্তর্জাতিক / মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃত্যু ১৬০০ ছাড়ালো, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের খুঁজছে স্থানীয়রা - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে...

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃত্যু ১৬০০ ছাড়ালো, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের খুঁজছে স্থানীয়রা

March 30, 2025 12:58:41 PM   অনলাইন ডেস্ক
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃত্যু ১৬০০ ছাড়ালো, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের খুঁজছে স্থানীয়রা

মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানি ১৬০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া প্রিয়জনদের বাঁচানোর আশায় স্থানীয় বাসিন্দারা খালি হাতে ধ্বংসাবশেষ সরানোর চেষ্টা করছেন।

দেশটির ঐতিহ্যবাহী নগরী ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দেলে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ মানুষের এই শহরটি ভূমিকম্পে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উদ্ধারকর্মীরা শুক্রবার থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, আন্তর্জাতিক সাহায্যও প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো এখনো সহায়তা পায়নি। অসহায় সাধারণ মানুষ নিজেরাই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষদের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। ভূমিকম্পের ৩০ ঘণ্টা পর মান্দেলের একটি ১২ তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে অলৌকিকভাবে এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে রেড ক্রসের আশঙ্কা, এখনো প্রায় ৯০ জন ওই ভবনের নিচে আটকে রয়েছেন।

আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনায়, একটি টাউনশিপের একটি ভবনের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক শিক্ষকসহ ১২ জন প্রিস্কুল শিশু।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক, যা ইয়াঙ্গুন, রাজধানী নেপিদো ও মান্দেলেকে সংযুক্ত করে, সেখানে বিশাল ফাটল ধরেছে। ফলে পরিবহন ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

চিকিৎসাসামগ্রীরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত ট্রমা কিট, রক্তের ব্যাগ, অ্যানেস্থেশিয়া, প্রয়োজনীয় ওষুধ কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য তাঁবু।

উদ্ধারকর্মীরা জানান, এখনো অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন। একজন উদ্ধারকারী বলেন, "আমরা তখনই কাউকে উদ্ধার করতে পারি, যখন কোনো জীবিত মানুষের সাড়া পাই।"

শনিবার সকালে মান্দেলের কিয়াউকসে জেলার সিংকাই টাউনশিপে একটি বেসরকারি স্কুলের ধ্বংসস্তূপ থেকে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পাঁচজন নারী ও একজন পুরুষ উদ্ধারকারীদের পৌঁছানোর আগেই মারা যান। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্কুলকর্মীরা ছিলেন।

সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একজন উদ্ধারকর্মী বিবিসিকে বলেন, "আমাদের যা কিছু আছে, তাই দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ধসে পড়া স্কুলের নিচে আটকে থাকা একটি মেয়েকে বের করার জন্য আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করছি।"

যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। উদ্ধারকর্মীরা জানান, "আমাদের ইন্টারনেট নেই, ফোন লাইনও কাজ করছে না। তাই আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। উদ্ধারকারী দল পৌঁছেছে, কিন্তু তারা কোথায় যাবে, তা জানে না, কারণ ফোন লাইন কাজ করছে না।"

সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল মান্দেলে অঞ্চলে ১৫০০-র বেশি ভবন ধসে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট পরিস্থিতিকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে, এবং কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

এছাড়া, ভূমিকম্পে রানওয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মান্দেলের বিমানবন্দর অকার্যকর হয়ে পড়েছে। জান্তা সরকার বলছে, বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে পুরো দেশটাই যেন এক বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাজারো মানুষ তাদের স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন, কেউ হয়তো অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার আশায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন। সাহায্য যত দ্রুত পৌঁছাবে, ততই হয়তো কিছু জীবন এখনো রক্ষা করা সম্ভব।