
ভয়াবহ ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শহরটিতে একাধিক বহুতল ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, মান্দালে থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের অনেক ভবনও কেঁপে ওঠে। আতঙ্কিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে।
ভূমিকম্পের ফলে ব্যাংকক স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যায় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মান্দালের ১৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরে, মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রধান ভূমিকম্পের পর একটি শক্তিশালী পরাঘাতও অনুভূত হয়েছে।
মিয়ানমারের সরকার বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে দেশটির সামরিক বাহিনী একাধিক অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। মিয়ানমার দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন এবং হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করতে ইয়াংগনের আশপাশ ঘুরে দেখছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে মান্দালের বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়া ভবন ও রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ দেখা গেছে। তবে এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ভূমিকম্প শুরু হলে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। তিনি চোখের সামনে পাঁচ তলা একটি ভবন ধসে পড়তে দেখেছেন। আতঙ্কে শহরের মানুষজন রাস্তায় নেমে এসেছে, কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।
তেট নাইং উ নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ধসে পড়া একটি চায়ের দোকানের ভেতরে কয়েকজন আটকা পড়েছেন। তিনি বলেন, "আমরা ভেতরে যেতে পারছি না। পরিস্থিতি খুবই খারাপ।"
ভূমিকম্পে মান্দালের একটি মসজিদও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। মিয়ানমারের একটি মসজিদ আংশিক ধসে পড়ায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরও দুই প্রত্যক্ষদর্শী। তবে এটি মান্দালের মসজিদ কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্যারিসভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মিয়ানমারে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কম্পন মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া। মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াংগনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে অনেকে ভবনের বাইরে দৌড়ে চলে আসেন।
ব্যাংককের অনেক এলাকাতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হয়ে অনেকে হোটেল থেকে গোসলের ও সুইমিং পোশাক পরেই বেরিয়ে আসেন। ব্যাংককের কেন্দ্রে একটি অফিস টাওয়ারে অন্তত দুই মিনিট ধরে দুলতে থাকে। এ সময় দরজা-জানালা ভেঙে পড়ার তীব্র শব্দ শোনা যায়।