Date: May 10, 2024

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / বিশেষ নিবন্ধ / মসজিদ যখন হেদায়াহবিহীন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

মসজিদ যখন হেদায়াহবিহীন

February 26, 2023 05:58:29 PM   সম্পাদকীয়
মসজিদ যখন হেদায়াহবিহীন

মুস্তাফিজ শিহাব


শেষ যামানা সম্পর্কে বলতে গিয়ে রসুল উল্লেখ করেছেন, “এমন সময় আসবে যখন মসজিদগুলো হবে লোকে লোকারণ্য কিন্তু সেখানে কোন হেদায়াহ থাকবে না।” রসুলের এই কথাটি অত্যন্ত ভয়ংকর ও তাৎপর্যপূর্ণও বটে। ইসলামের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে মসজিদ কিন্তু শেষ যামানায় যখন সেই মসজিদই লোকে লোকারণ্য হওয়া সত্ত্বেও হেদায়াহহীন হবে তখন এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের যথাযথভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন।
বর্তমানের মসজিদগুলোর ব্যাপারে কাউকে আর নতুন করে বলে দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। সকলেই জানে বর্তমানে সারা দুনিয়ায় মসজিদের অভাব নেই। জাঁকজমকপূর্ণ মসজিদগুলোর কোনটি বহুতল বিশিষ্ট, কোনটির সুউচ্চ গম্বুজ, কোনটির সেই গম্বুজ আবার সোনা দিয়ে তৈরি। আমাদের দেশের কথাই যদি চিন্তা করি তবে দেখবো আমাদের ঢাকাকে মসজিদের শহর বলা হয়। এই সকল মসজিদে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক নামাজ পড়েন। শুক্রবারে উপচে পড়া অবস্থার সৃষ্টি হয় ও তখন অতিরিক্তি মানুষকে জায়গা দেওয়ার জন্য মসজিদ সংলগ্ন অংশে চাটাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়। বেশিরভাগ মসজিদেই এখন ঝাড়বাতি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের সুব্যবস্থা রয়েছে। এক কথায় যদি বলতে চাই তবে মসজিদগুলোকে দেখতে অভিজাত বাড়ি অথবা রাজপ্রাসাদের মতো লাগবে। যে কেউ এর মনোমুগ্ধকর কারূকাজ দেখে আপ্লুত হবে। কিন্তু আল্লাহর রসুল এই লোকে-লোকারণ্য মসজিদগুলোকে হেদায়াহহীন বলে ভবিষ্যদ্বানী করেছেন। এই সাংঘাতিক বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
সর্বপ্রথম আমাদের জানতে হবে হেদায়াহ কী। হেদায়াহ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হলো, কোন দুষ্ট প্রকৃতির গোনাহগার ব্যক্তিকে যদি উপদেশ দিয়ে মদ খাওয়া ছাড়ানো যায়, চুরি ডাকাতি ছাড়ানো যায়, নামাজী বানানো যায় ইত্যাদি আমল করানো যায় তবে মনে করা হয় ব্যক্তিটি হেদায়াহ পেয়েছে। এই ধারণা পুরোপুরি ভুল। হেদায়াহ অর্থ হচ্ছে সঠিক পথে চলা অর্থাৎ সঠিক দিক নির্দেশনা (Right direction, guidance, orientation)। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেছেন, “আমি আমার রসুলকে হেদায়াহ ও সত্যদীন দিয়ে প্রেরণ করেছি (সুরা ফাতাহ ২৮)।” তিনি প্রতিটি যুগেই নবী রসুলের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য হেদায়াহ বা সঠিক পথ প্রেরণ করেছেন। সেই সঠিক পথ কী? সেই সঠিক পথ হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম মানি না। মহান আল্লাহ প্রতিটি নবী রসুলের মাধ্যমেই এই একটি সূত্রই প্রেরণ করেছেন যে সূত্র মেনে নিলে মানবজাতি শান্তিময় একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারবে।
আজ আমরা মুসলিম জাতি হেদায়াতে নেই। আমরা বহু আগেই আল্লাহর দেয়া সঠিক পথ, সিরাতুল মুস্তাকিম বা সহজ সরল পথ থেকে দুরে সরে এসেছি। আমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কারও হুকুম মানি না এই সূত্র মেনে চলছি না। আল্লাহ এই শেষ দীন ইসলামে সকল বিষয়ের সম্যক ধারণা প্রদান করেছেন। তিনি পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন ইত্যাদি সকল অঙ্গনে মানবজাতি কিভাবে চলবে তার পরিপূর্ণ রূপরেখা শেষ রসুলের মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন। শেষ রসুল (স.) ও তাঁর সাহাবীরা তা অর্ধ দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে ন্যায় সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল তার জ্বলন্ত সাক্ষী ইতিহাস। কিন্তু আজ আমরা আল্লাহর এই ব্যবস্থায় ছায়াতলে নেই। আমাদের ঘাড়ের উপর বসে আছে পাশ্চাত্য দাজ্জালীয় সভ্যতা। আমরা এই পাশ্চাত্য সভ্যতাকে নিজেদের রব বলে মেনে নিয়েছি এবং তাদের শিখানো তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে আমাদের সমাজ, পরিবার পরিচালনা করছি। আমরা নামাজ, রোজা করে যাচ্ছি এবং ভাবছি আমরা হেদায়েতে রয়েছি কিন্তু আমরা আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে বহু আগেই বাদ দিয়ে দিয়েছি। তাই আমাদের মসজিদগুলো আজ পরিপূর্ণ কিন্তু আমরা সঠিক পথে নেই। আমরা যারা সেই মসজিদগুলো পরিপূর্ণ করছি তারা কেউ গণতন্ত্র, কেউ সমাজতন্ত্র, কেউ সরকারীদল, কেউ বিরোধীদল ইত্যাদি বহু তন্ত্র-মন্ত্রের অনুসারী। আমরা একদিকে পাশ্চাত্য সভ্যতার দাসত্ব করে চলেছি ও অন্যদিকে ব্যক্তিগত আমল অর্থাৎ নামাজ, রোজা, হজ করে ভাবছি আমরা হেদায়াতে রয়েছি কিন্তু আসলে আমরা বহু আগেই হেদায়াহচ্যুত দালালাতে অবতীর্ণ হয়েছি । 
এখন আমাদের করণীয় হচ্ছে এই পথভ্রষ্ঠতা থেকে সরে এসে সিরাতুল মুস্তাকিমে উঠা। আমরা যদি আল্লাহর প্রেরিত সূত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোতবেক নিজের ঐক্যসূত্রে গাঁথতে পারি তবে আবার আমরা সমাজে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। রসুল শেষ যামানা সম্পর্কে যে কথা বললেন তা আমাদের উপলব্ধিতে আনতেই হবে। আমরা যদি ইবলিসের তথা দাজ্জালের দেখানো পথ থেকে সরে আসতে না পারি তবে আমাদের এত আমল সব তো অর্থহীন হবেই এমনকি আমরা জান্নাতের বদলে জাহান্নামের রাস্তায় অগ্রগামী পর্যায়ে অবস্থান করব।
 

(লেখক: সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি)