
যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানল শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে হুমকি তৈরি করেছে। দমকল কর্মীরা রাতদিন চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। হেলিকপ্টার থেকে পানি এবং অগ্নিনিরোধক ছিটানো হলেও আগুন এখনো ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
পালিসেইডসের দাবানল প্রায় ২৩ হাজার একর এলাকা ধ্বংস করেছে। মান্ডেভিল ক্যানিয়নের দিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ব্রেন্টউডসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বদের বাসভবন ছাড়াও গেটি সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ হিলটপ মিউজিয়াম রয়েছে। মিউজিয়ামটি ভ্যান গঁগ, মনেট এবং ডেগাসের শিল্পকর্মসহ প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করছে। এখনো পর্যন্ত মিউজিয়ামের কোনো ক্ষতি হয়নি।
ইটন এলাকাতেও ১৪ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। অন্যদিকে, কেনেথ ও হার্স্ট এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে, বাতাসের গতিবৃদ্ধির পূর্বাভাস পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।
ফায়ার হাইড্রেন্টে পানি না থাকা এবং প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের অভাব দমকল কর্মীদের কাজ ব্যাহত করছে। লস এঞ্জেলস ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি এই সংকটের জন্য বাজেট কমানোকে দায়ী করেছেন।
অন্যদিকে, দাবানলের সময় শহরের মেয়র কারেন ব্যাস ঘানায় অবস্থান করায় তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছেন। প্রায় ৭০ হাজার মানুষ তার পদত্যাগের দাবিতে একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে।
লুটপাট ঠেকাতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কারফিউ ভঙ্গ ও লুটপাটের জন্য দুই ডজনের বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
দাবানল নিয়ন্ত্রণে কানাডা, মেক্সিকো এবং ফেডারেল সরকারের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও ১ লাখ ৬৬ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলা হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসন দাবানল নিয়ন্ত্রণে পানি সংকট এবং অগ্নিনিরোধক সরঞ্জামের সমস্যা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ভয়াবহ দাবানল শুধু মানুষ নয়, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। দমকল কর্মীদের প্রচেষ্টার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করছে। তবে, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনতে আরো সময় লাগতে পারে।