Date: May 03, 2024

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / প্রযুক্তি / সাইবার ক্রাইমের ব্যাপারে প্রাশাসনকে আরো সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

সাইবার ক্রাইমের ব্যাপারে প্রাশাসনকে আরো সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন

October 03, 2023 02:03:15 PM   প্রযুক্তি ডেস্ক
সাইবার ক্রাইমের ব্যাপারে প্রাশাসনকে আরো সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন

ওবায়দুল হক বাদল: 
প্রতিদিনের মত আজও অফিসে এসে ডেস্কে বসলাম। একটু পরে চা দিয়ে গেল পিওন। ‘চা’ টা শেষ করার আগেই আবার এক গাদা চিঠি রেখে গেল। চা শেষ করে চিঠিগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। তার মধ্যে একটি বেনামী চিঠি চোখে পড়ল। দেখলাম চিঠিটি আলোচিত ব্যক্তিত্ব হেযবুত তওহীদের নেতা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম সম্বন্ধে। একটা বাড়তি কৌতুহল কাজ করছিল। অন্য চিঠিগুলো পাশে সরিয়ে রেখে তারটাই প্রথমে খুললাম।

চিঠির বিষয়বস্তু দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। হেযবুত তওহীদের নেতার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির এক ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে চিঠিতে। ভিডিওর স্ক্রিনশটসহকারে বিভিন্ন তথ্য দেয়া হয়েছে। আমি তো হতভম্ব!

তৎক্ষণাত আমি বিষয়টি নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। ইন্টারনেটে সার্চ করলাম। দেখলাম- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য মারুফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বহুদিন আগের এমন একটি পোস্টের স্ক্রিনশট সোস্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘পরকিয়া প্রেমে ধরা খাইলো মাসুদ সিদ্দিকী’ এমন শিরোনামে  একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্টটি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে জানা যায়, নানাবিধ বিরোধের জের ধরে এই নোংরা মিথ্যাচার চালানো হয় মারুফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখা যায়, যে ছবিটি মারুফ সিদ্দিকীর নামে চালিয়ে দেওয়া হলো সেটি একটি সাউথ ইন্ডিয়ান পর্ন সাইট এর ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নেওয়া। ঘটনাটি নিয়ে তখন আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

BNP Jodhha

 আমার কাছে হেযবুত তওহীদের নেতা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম সম্বন্ধে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা বর্ণনা করে যে ছবিটি পাঠানো হলো এটি মারুফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা সেই ছবিটিই। অর্থাৎ সাউথ ইন্ডিয়ান পর্ন সাইট এর ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে যে ছবিটি মারুফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধেও সেই একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম!

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের সাথে এক শ্রেণির আলেমদের একটা আদর্শিক দ্বন্দ্বের কথা আমার জানা ছিল। আদর্শগত মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তাই বলে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে এমন হীন নোংরা মিথ্যাচার করা সম্ভব তা আমার ধারণায় ছিল না। তাও আবার আলেমদের দ্বারা!

আলেমদের দ্বারা বলছি এই কারণে যে, পরবর্তীতে ইন্টারনেট থেকে আরো কিছু ডকুমেন্ট আমার হাতে আসে যেখানে দেখা যায়, মাদ্রাসাশিক্ষক ও ওয়াজকারী হাফেজ মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান হুযাইফির ফেসবুক প্রোফাইলে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে এই স্ক্রিনশটটি দিয়েই মিথ্যাচার চালানো হয়েছিল। এবং তা সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও ঐ আলেম পরবর্তীতে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছিলেন।

পরবর্তীতে হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে পর্ন ভিডিওর আসল ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ চেহারা প্রকাশ করে এই মিথ্যাচারের জবাব দেয়া হয়।

Huzaifi against HT (1)
 এ বিষয়ে হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কিছুদিন আগে একটি অশ্লীল ছবির সাথে তাঁর নাম জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে মিথ্যাচার চালায় একদল লেবাসধারী ধর্মব্যবসায়ীরা। তাদের আইডি থেকে ছবিটি কপি করে তাদের ধর্মান্ধ অনুসারীরা প্রচার চালায়। ছবিটিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যায় পেছন দিক থেকে দেখলে ঐ ব্যক্তির হেয়ার স্টাইল অনেকটা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের হেয়ার স্টাইলের মত। তবে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলটা পেছন থেকে ধরা বিধায় পুরো চেহারা দেখা যায় না। এই ছবিটি পোস্ট করে বলে দেওয়া হলো ইনি হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। হাফেজ, মাওলানা, মুফতিদের প্রোফাইল ভরে গেল ওই ছবিতে। ছবিটি হেযবুত তওহীদের নজরে আসার পর ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখা গেল ছবিটি একটি পর্ন সাইট থেকে নেওয়া হয়েছে। হেযবুত তওহীদের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা কত নিচে নেমেছে তা চিন্তা করে দেখুন বলেন হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো, ওই পর্ন ভিডিওর আসল ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ চেহারা প্রকাশ করে অপপ্রচারকারীদের মিথ্যাচারের জবাব দেবার পরও তারা অপপ্রচার থেকে বিরত না হয়ে নির্লজ্জের মত এখনও ছবিটি ব্যবহার করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। শত্রুতাবশত কোনো ব্যক্তির চরিত্রহননের অনেক ঘটন দেখা যায়, কিন্তু আলেম নামধারী ধর্মব্যবসায়ীরা তার চরিত্রহননের আশায় যে প্রক্রিয়াটি বেছে নিয়েছে তা সম্ভবত সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এখন তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। এই মিডিয়া হাউজে চিঠি প্রেরণ তারই প্রমাণ বলেন তিনি।

ছবির মাথা কেটে এডিট করে অশ্লীল ছবির সাথে জুড়ে দিয়ে কিংবা আধুনিক এ আই টেকনোলজি ব্যবহার করে ‘ডিপ ফেস এডিট’ এর মাধ্যমে ব্ল্যাকমেল করে স্বার্থ উদ্ধার অথবা প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে প্রতিপক্ষের চরিত্র হননের অপচেষ্টা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিডিয়ার বদৌলতে প্রায়ই এরকম সংবাদ দেখতে পাই আমরা। এসব নিকৃষ্টতার বলি হচ্ছেন শহর কিংবা গ্রামের নিষ্পাপ কোনো গৃহবধূ, স্কুল শিক্ষার্থীরাসহ বড় বড় সেলিব্রেটিরাও। ঘটছে আত্মহননের মত ঘটনাও। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রতিহিংসা পরায়ণ এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সম্মানিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও।

সম্প্রতি এ আই টেকনোলজি ব্যবহার করে ‘ডিপ ফেস এডিট’ এর মাধ্যমে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নওরিন আফরোজ পিয়ার ফেস অশ্লীল ভিডিওর সাথে জুড়ে দেয়া হয়। এমনকি সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প, প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী কেট মিডলটনও রেহাই পায়নি।

আজ দৈনিক দেশের পত্রের ঠিকানায় সেই মিথ্যাচারে ঠাসা একটি চিঠি আসল এ নিয়ে সংবাদ প্রচারের দাবিতে, যা আমার হাতে এসে পড়ল। পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিডিয়াকে বিভ্রান্ত করাও একটি অপরাধ।

অভিজ্ঞ মহল মনে করেন,  এখনি যদি এদের লাগাম টেনে ধরা না হয় তাহলে এদের দৌরাত্ম কোথায় গিয়ে পৌঁছবে তা বোঝা কঠিন নয়। যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিডিয়া হাউজে চিঠি পাঠাতে পারে তারা যেকোনো রকমের দুঃসাহস দেখাতে পারে। সাইবার ক্রাইম এর ব্যাপারে প্রশাসনের আরো সক্রিয় ও সজাগ হওয়া প্রয়োজন।