Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / সোনাইমুড়িতে জোড়াখুনের বিচার শুরুর দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

সোনাইমুড়িতে জোড়াখুনের বিচার শুরুর দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন

March 14, 2023 09:28:47 PM   নিজস্ব প্রতিবেদক
সোনাইমুড়িতে জোড়াখুনের বিচার শুরুর দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন

২০১৬ সালের ১৪ মার্চ নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের দুই সদস্যকে জবাই করে হত্যা, বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার ও বিচার শুরুর দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন করেছে হেযবুত তওহীদ। মানববন্ধনে বক্তারা সেই পৈশাচিক ঘটনার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সরকারের প্রতি সাত দফা দাবি পেশ করেন।

ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে গতকাল সকাল ১০টায় রাজধানীর কাওরান বাজারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, ঢাকা বিভাগের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, যুগ্ম নারী বিষয়ক সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা, ঢাকা বিভাগের নারী বিষয়ক সম্পাদক তাসলিমা ইসলাম প্রমুখ।

IMG_7995
 

ঢাকা বিভাগের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ বলেন, ধর্মব্যবসায়ী উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করে বারবার হামলা চালিয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ই মার্চের এ দিনটিতেই হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের বাড়িতে নির্মাণাধীন মসজিদকে গির্জা বলে গুজব রটিয়ে দিয়ে, মিথ্যা হ্যান্ডবিল বিলি করে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি হামলা, জ্বালাও-পোড়াও, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সেদিন তারা হেযবুত তওহীদের সদস্য ইব্রাহিম রুবেল ও সোলায়মান খোকনকে প্রচণ্ড প্রহারের পর তাদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়। তাদের চোখ উপড়ে নেয়। তারপর গরু জবাই করা ছুরি দিয়ে জবাই করা হয়। পেট্রোল ঢেলে তাদের দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পৈশাচিক উল্লাসে স্থানীয় পুলিশের উপস্থিতিতেই তারা এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডটি ঘটায়।

তিনি বলেন, ঘটনার আগে থেকেই সেই স্থানীয় স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল ও ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছিল। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে উদ্যোগ নিলে এই মর্মান্তিক নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটত না। এই ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। বহু আসামী আইনের আওতায় আসেনি, যারা এসেছে তারা রাজনৈতিক হয়রানীর ধুয়া তুলে সহজেই জামিনে বেরিয়ে এসে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কাজেই আবারও হামলার আশঙ্কা থেকে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকতে পারছি না।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে আমরা আবারও লক্ষ করছি, ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও স্থানীয় ষড়যন্ত্রকারী কুচক্রী মহল আবারও হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যাচার চালাচ্ছে ও হামলার উসকানি দেওয়া আরম্ভ করেছে। বিশেষ করে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বিরাজমান শান্তিময় পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠিত মসজিদ, মক্তব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলার হুমকি দিচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে এখনই আইনী শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এরা যে কোনো ধরনের তাণ্ডব সৃষ্টি করতে পারে। তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার শুরু করতে হবে। এবং সোনাইমুড়িতে অবস্থিত হেযবুত তওহীদের স্থাপনা ও সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

কেন্দ্রীয় নারী এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী বলেন, ধর্মব্যবসায়ী উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘গির্জা’ বলে গুজব রটিয়ে যেই মসজিদটিকে গুড়িয়ে দিয়েছিল, বর্তমানে সেই মসজিদটি পুনর্নিমাণ করা হয়েছে। আমাদের সদস্যদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত অর্থ দিয়ে, কঠোর শ্রমের বিনিময়ে তিল তিল করে গড়ে তোলা হয়েছে শহীদী জামে মসজিদ। এখন সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হচ্ছে। সোনাইমুড়ীতে যেখানে উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল, সেই ধ্বংসস্তুপের উপরেই বর্তমানে আমরা নির্মাণ করেছি চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় বহু কৃষি প্রকল্প, গবাদি পশুর খামার, মৎস্য চাষ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠান, পোশাক শিল্প কারখানা, বিদ্যালয়, চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নের মানুষ আজ শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা পাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আজ প্রমাণিত হয়েছে যে ফতোয়াসন্ত্রাসীরা চায় ধ্বংস, আর আমরা চাই নির্মাণ। তারা চায় অন্ধত্ব, আমরা চাই শিক্ষা। তারা চায় বিভক্তি, আমরা চাই সম্প্রীতি। তারা চায় শত্রুতা, আমরা চাই একতা। তারা চায় উন্মাদনা, আমরা চাই শান্তি। তাদের আছে প্রতিহিংসা, আমাদের আছে ক্ষমা। হেযবুত তওহীদের এই জাতি-গঠনমূলক ও উন্নয়নমুখী প্রত্যাশাগুলো যেন পূর্ণ না হয় সেজন্যই বারবার ধর্মব্যবসায়ীরা হেযবুত তওহীদের পথরোধ করে দাঁড়াচ্ছে, বারবার ধ্বংসসাধন কেেছ, রক্তপাত ঘটাচ্ছে। তাই এসব ষড়যন্ত্রকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখী করতে হবে।
কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাংবিধানিক রাষ্ট্র। এখানে আইন-আদালত রয়েছে, সংবিধান রয়েছে। সংবিধান আমাদেরকে কথা বলার অধিকার দিয়েছে, ধর্মীয় মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে, সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। আমাদের সেই অধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। ২০১৬ সালের ১৪ মার্চের সেই পৈশাচিক ঘটনার সাত বছর পার হয়ে গেলেও এখনও অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতা বিচারহীনতারই নামান্তর। আমরা দেখেছি, যখন হেযবুত তওহীদের উপর হামলা হয় তখন মানবাধিকার কর্মীরা চুপ থাকেন, গণমাধ্যমকর্মীরা নিরবতা পালন করেন। আমাদের প্রতি আপনাদের এই বৈষম্যমূলক আচরণ কেন? আমরা ইসলামের কথা বলি, এটাই কি আমাদের অপরাধ। হেযবুত তওহীদের উপর অন্যায়-অবিচার দেখেও আপনাদের এই নীরবতা, আপনাদের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনাদের কথা বলতে হবে। তা নাহলে একদিন এই উগ্রবাদিরা আপনাদেরও গিলে খাবে। তাই সময় থাকতে সজাগ হোন, সোচ্চার হোন। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ান, সত্যের পক্ষে দাঁড়ান।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানী, ঢাকা মহানগর প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাউল ইসলাম, ঢাকা জেলা সভাপতি ইউনুস মিয়া, বৃহত্তর মিরপুর থানার সভাপতি আব্দুল হক বাবুল প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে হেযবুত তওহীদের দুই সদস্যকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচারের দাবিতে এবং উগ্রতা, ধর্মব্যবসা, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন থেকে হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি সাত দফা দাবি পেশ করা হয়- 
১. ২০১৬ সালের ১৪ই মার্চে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষীরহাটের পোরকরা গ্রামে মিথ্যা গুজব রটিয়ে হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও প্রকাশ্য দিবালোকে দুইজনকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল ও পরোক্ষভাবে যারা ইন্ধন যুগিয়েছিল তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

২. হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যাদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, গ্রেফতারও করা হয়নি, কিন্তু এখন তাদের নাম, ঠিকানা ও হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য বেরিয়ে আসছে। এই হামলাকারীদেরকেও দ্রুত গ্রেফতার করে সম্পূরক অভিযোগপত্রের মাধ্যমে বা যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৩. উগ্রবাদী সন্ত্রাসী ও ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী আবারও মিথ্যা হ্যান্ডবিল রচনা করে বিভিন্ন মসজিদে, মাদ্রাসায়, রাস্তাঘাটে, দোকানে বিতরণ করছে এবং যেটা আমরা বলিনি, করিনি, যেটা আমাদের আকিদা নয়, বিশ্বাস নয়, সেগুলোকে আমাদের উপর আরোপ করছে। তারা চাচ্ছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে। এসব মিথ্যা হ্যান্ডবিল বাজেয়াপ্ত করে এহেন অপপ্রচারের সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।

৪. সোনাইমুড়িতে বর্তমানে আমরা অন্তত ৪২ টি উন্নয়ন প্রকল্প গড়ে তুলেছি। সেই উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে থাকা স্থাপনাগুলো যেমন- স্কুল, মসজিদ, মক্তব, গবাদি পশুর খামার, মৎস্য খামার, বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা, কুটির শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সেখানে অবস্থানরত সদস্য-সদস্যাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, চাষীরহাট ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে ওয়াজ মাহফিলের নামে সভা-সমাবেশ করে উগ্রবাদী বক্তাদের ভাড়া করে এনে হেযবুত তওহীদের এমামের নাম ধরে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে হামলা করার প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করে উগ্রবাদী বক্তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে ।

৬. ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি, মাদক, হুজুগ, গুজব, জঙ্গিবাদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে সারাদেশে হেযবুত তওহীদ যে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেই অনুষ্ঠানগুলোর যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।
৭. ফেসবুক, ইউটিউবসহ সকল সোশ্যাল মিডিয়াতে আসল অথবা ফেক আইডি ব্যবহার করে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে মিথ্যা অপপ্রচারমূলক কন্টেন্ট, হত্যার হুমকি, গুজব রটনা, মিথ্যা ফতোয়া প্রদানের মাধ্যমে যারা সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে তাদের পরিচয় ও অবস্থান চিহ্নিত করে আইসিটি আইনের আওতায় আনতে হবে।