Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / খেলাধুলা / সুখস্মৃতির অ্যাডিলেইডে ভারত-বধের ‘আপসেটের’ অপেক্ষা - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

সুখস্মৃতির অ্যাডিলেইডে ভারত-বধের ‘আপসেটের’ অপেক্ষা

November 02, 2022 09:56:08 PM   ক্রীড়া প্রতিবেদক
সুখস্মৃতির অ্যাডিলেইডে ভারত-বধের ‘আপসেটের’ অপেক্ষা

২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর মঞ্চে এবার ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। অ্যাডিলেই ওভালে ঢুকতেই দারুণ রোমাঞ্চ খেলে গেল শরীরে। এই তো সেই মাঠ! অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী মাঠ এটি, স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের স্মৃতি বিজড়িত আঙিনা। তবে এই মাঠ বাংলাদেশ ক্রিকেটের রূপকথায় ঢুকে গেছে ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে। মাঠে তাকিয়ে উৎসুক চোখ জোড়ার নানা কৌতুহল, কোন প্রান্ত থেকে টানা দুটি বোল্ড করে আঙুল উঁচিয়ে দুনিয়া জয়ের উল্লাসে ছুটেছিলেন রুবেল হোসেন? মাঠের ওই অংশটায় হয়তো উপুড় হয়ে পড়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, তার ওপর সতীর্থদের আনন্দস্তুপ। এই তো সেই ধারাভাষ্যকক্ষ, যেখানে বসে নাসের হুসেইনের উচ্চারণ, ‘দা বাংলাদেশ টাইগার্স হ্যাভ নকড দা ইংল্যান্ড লায়ন্স আউট অব দা ওয়ার্ল্ড কাপ…।” ২০১৫ বিশ্বকাপে এই মাঠেই ইংল্যান্ডকে বিদায় করে কোয়ার্টার-ফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচ থেকেই শুরু নতুন আরেক অধ্যায়ের। ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে জন্ম হয় নানা বিতর্কের এবং সেই থেকে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই পেয়ে যায় নতুন মাত্রা। বিশ্বকাপের পর দুই দলের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ আর পরের নানা দ্বৈরথ এতটাই উত্তেজনার রসদ জোগায়, অনেকে সেখানে খুঁজে পান ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের চেয়েও বেশি ‘হাইপ।’ ২০১৫ বিশ্বকাপের সেই ইতিহাস গড়ার মঞ্চে আবার ফিরেছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ভারত। কিন্তু উত্তেজনা বলতে গেলে উধাও। নেই কোনো ঝাঁজ। বাজেনি যুদ্ধের দামামা। বরং প্রতিপক্ষকে পরিস্কার ফেভারিট ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অকপট বক্তব্য, বাংলাদেশ ভারতকে হারালে তা হবে অঘটন।
অ্যাডিলেইড ওভালে আজ বুধবার এই লড়াই শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়। অ্যাডিলেইড সময় তখন হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা, এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের একমাত্র রাতের ম্যাচ। ২০১৫ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচের পর এই প্রথম অ্যাডিলেইডে খেলবে বাংলাদেশ। এমনিতে অতীতের আঙিনায় বিচরণ করতে খুব একটা পছন্দ নয় সাকিব আল হাসানের। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেই ম্যাচের প্রভাব এতটাই তীব্র যে সাকিব পর্যন্ত প্রেরণার উৎস করে নিলেন ৭ বছর আগের স্মরণীয় সেই জয়কে। “ওই দলের থেকে মনে হয় শুধু আমি আর তাসকিন আছি। অবশ্যই ভালো স্মৃতি। ভালো স্মৃতিগুলো সবসময়ই অনুপ্রেরণা জোগায়। আশা করি যে ওই স্মৃতি আমাদের মানসিকভাবে একটু সাহায্য করে।” অতীতের প্রেরণা যেমন আছে, মানসিকভাবে চাঙা থাকার সাম্প্রতিক উপকরণও আছে বাংলাদেশ দলের জন্য। সবশেষ ম্যাচের জয়! যদিও সেই জয় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে লড়াই আরও অযুত গুণে কঠিন। তবে জয়ের ধরন এমন ছিল, শেষ সময়ে রোমাঞ্চ-উত্তেজনার এমন ঢেউয়ে ভেসে মানসিক চাপের লড়াইয়ে উতরে গেছে দল, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে তা সাহস জোগাচ্ছে অধিনায়ককে। “যে কোনো ম্যাচ জিতলে অবশ্যই ভালো লাগে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বেশিরভাগ সময়ই শেষ বা তার আগের ওভারে ম্যাচের ফল চূড়ান্ত হয়। যেহেতু অল্প সময়ের খেলা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেশি হয়, তাই এখানে ক্লোজ ম্যাচই বেশি হবে। এসব মুহূর্তে নার্ভ ধরে রাখতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগে যেটা হচ্ছিল, আমরা ক্লোজ ম্যাচগুলো হেরে যাচ্ছিলাম। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো আমরা শিখছি। আমি বলবো না যে শিখে গেছি। তবে একটু তো উন্নতি আছেই। যেখানে আগে ক্লোজ ম্যাচগুলো গেলেই আমরা হেরে যেতাম। এখন জেতা শুরু করেছি।” তবে সামনে তাকিয়ে যখন শুরুতেই দেখছেন ভারতকে, বাংলাদেশ অধিনায়ক একটু দমে যাচ্ছেন। কিংবা সতর্ক থাকছেন। নয়তো দলকে চাপমুক্ত রাখার কৌশল নিচ্ছেন। ভারতকে তিনি এগিয়ে রাখছেন অকপটে।
বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর আগে সাকিব বলেছিলেন, নিজেদের সেরা বিশ্বকাপ সাফল্যের লক্ষ্য তাদের। প্রথম তিন ম্যাচের দুটি জিতেই সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। যদিও জয় দুটি নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, তারপরও তো সেরা সাফল্য! পরের দুই ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়েই সাকিবের আশা, আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ের মতো কোনো চমক দেখানোর। “পরবর্তী লক্ষ্য হলো দুটি ম্যাচ খুব ভালোভাবে খেলা। দুটি ম্যাচের কোনো ম্যাচও যদি জিততে পারি, সেটা আপসেট হিসেবে গণ্য হবে। সেই আপসেটটা করতে পারলে আমরা খুশি হব। না করতে পারলে বেশি কিছু বলার নেই। দুই দলই কাগজেকলমে আমাদের চেয়ে ভালো। তবে আমরা যদি ভালো খেলি, আমাদের যদি দিন থাকে, তাহলে কেন পারব না! এই বিশ্বকাপেই আমরা দেখেছি আয়ারল্যান্ড হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে, জিম্বাবুয়ে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। ওরকম একটা রেজাল্ট হলে অবশ্যই আমরা খুশি হব।” পয়েন্ট তালিকায় আপাতত দুই দল আছে পিঠেপিঠি অবস্থানে। পয়েন্ট সমান (৪), রান রেটে পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবে ভারতের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্য যে আসলে মহাসাগরসম, তা সুস্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“ভারত ফেভারিট দল। তারা এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা ফেভারিট নই, বিশ্বকাপ জিততে এখানে আসিনি। পরিস্থিতি বুঝতেই পারছেন। আমরা ভালো করেই জানি, ভারতের বিপক্ষে জিতলে এটি আপসেট হবে। আমরা চেষ্টা করব, সেরা খেলাটি খেলতে এবং আপসেট ঘটাতে।” একটা সময় বাংলাদেশের সব অধিনায়কের কণ্ঠে কম-বেশি এই ধরনের কথাই শোনা যেত। সেসব দিন তো অতীত হয়েছে বেশ আগেই! তার পরও সাকিব যখন এভাবে বলছেন, গভীরে ঢুকলে মনস্তাত্ত্বিক কারণটিই সম্ভাব্য মনে হয়। নিজেদের নির্ভার রাখার চেষ্টা হয়তো! তবে সাকিবের ঘণ্টা দেড়েক পরে সংবাদ সম্মেলনে এনে ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড় সাফ জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশকে সামান্যতম হালকাভাবে নেওয়ার কোনো ব্যাপারও তাদের প্রস্তুতি পর্বে নেই।  ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ অনুশীলন করেনি। সূচিতে অনুশীলন থাকলেও অবশ্য করা কঠিন হতো আবহাওয়ার কারণে। ভারতীয় দলের ঐচ্ছিক অনুশীলন অ্যাডিলেইড ওভালের নেটে শুরু হলেও দ্রুতই তা বন্দি হয়ে যায় ইনডোরে। আবহাওয়া বাগড়া দিতে পারে ম্যাচেও। পূর্বাভাস বলছে, বুধবার দিনের বেলা রোদ থাকলেও সন্ধ্যা থেকেই আকাশ মেঘলা হতে পারে। বৃষ্টির শঙ্কা আছে শতকরা ৬০ শতাংশ। হোবার্টে অবশ্য ম্যাচের দিন পূর্বাভাসে বৃষ্টির শঙ্কা ছিল ৯১ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ঠিকই হয়েছে এবং বাংলাদেশ পেয়েছে প্রত্যাশিত জয়। ভারতের বিপক্ষে জয়ের প্রত্যাশা অধিনায়কের কণ্ঠে না থাকলেও দলের অন্দরে নিশ্চয়ই আছে! সেরা বিশ্বকাপ সাফল্যের পর অপেক্ষা এবার নিজেদের নতুন উচ্চতায় তুলে নেওয়ার।