Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / হেযবুত তওহীদের নারীরা সত্যের জন্য লড়তে জানে : রুফায়দাহ পন্নী - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

হেযবুত তওহীদের নারীরা সত্যের জন্য লড়তে জানে : রুফায়দাহ পন্নী

May 13, 2024 10:59:40 AM   নিজস্ব প্রতিনিধি
হেযবুত তওহীদের নারীরা সত্যের জন্য লড়তে জানে : রুফায়দাহ পন্নী

স্টাফ রিপোর্টার: 
হেযবুত তওহীদের নারীরা সত্যের জন্য লড়তে জানে। হেযবুত তওহীদের মেয়েরা জীবন দিতে জানে। তারা পিছপা হয় না- বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী। গত শনিবার (১১ মে) রাজধানীর আইডিইবিতে অনুষ্ঠিত হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় তিনি আরো বলেন, আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। তারা জীবিত। ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে শহীদ হওয়া হেযবুত তওহীদের সদস্যা কুষ্টিয়ায় শহীদ রাবেয়া সেটার প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি শহীদ হয়ে প্রমাণ করেছেন যে, মেয়েরা লড়াই করতে জানে। হেযবুত তওহীদের মেয়েরা জীবন দিতে জানে। তারা পিছপা হয় না। কারণ তারা জানে আল্লাহ রসুল (সা.) এই শিক্ষা দেন নি। ইসলাম এই শিক্ষা দেয় না।

এর আগে তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গত দশ বছরে আমাদের দেশের নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর নির্যাতনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি একটা পরিসংখ্যানে পেলাম, নিম্ন থেকে উচ্চ আদালতে আড়াই লক্ষ শুধু নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা জমেছে। সর্বশেষ কুমিল্লায় সাত বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যার পর তার যে বস্তা বন্দি লাশ ধান ক্ষেতে পাওয়া গেল সেটা বিবরণ দিতে গিয়ে র‌্যাব কমান্ডার কান্নায় ভেঙে পড়েন। উচ্চ আদালতের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৮টি।

বিশ্বে নারীদের সংকটের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সামনে যে বিশ্বসংকট, জটিল অর্থনীতি, হিসাব-নিকাশ, রাজনীতির মারপ্যাচ, সমাজে দুর্নীতি এই জটিল, কঠিন ব্যাপারগুলো নারীদের আলোচ্য বিষয় নয়। এগুলো তাদের চিন্তার বিষয় নয়। কিন্তু যখন কোন দেশ আক্রান্ত হয় তখন সর্বপ্রথম ভয়াবহ অবস্থায় পড়ে নারী ও শিশু। কারণ নারী ও শিশু প্রাকৃতিকভাবেই অসহায় ও দুর্বল। ফলে আক্রান্ত দেশগুলোর নারীরা লাখে লাখে লাঞ্ছিত হয়, উদবাস্তু হয়, শিশুরা নিহত হয়। নারীদের সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়।

ইসলামের প্রকৃত আদর্শ প্রচারের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ফতোয়াবাজি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইসলামের প্রকৃত আদর্শ প্রচারের ক্ষেত্রে আমাদের সামনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠী। যারা ধর্মকে নিয়ে অপরাজনীতি করে নানা দল-মতের সৃষ্টি করেছে। তারা এক দলের একেক মার্কা নির্বাচন করে। এই শ্রেণিটি যারা ধর্মকে রুটি রুজি করে জীবিকা নির্বাহ করে। ওয়াজ করে মানুষের কাছ থেকে টাকা কামাই করে। গতকাল যে থাকে এতিমখানার মৌলভি সে আজ হেলিকাপ্টারে যাতায়াত করে। এই সেদিনও যে বাজারের মধ্যে গুড় বিক্রি করত আজ ঢাকা শহরে তার পাঁচটা ফ্ল্যাট। অথচ তারা হেযবুত তওহীদের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করে। মহামান্য এমামুয্যামানের পরিবার নিয়ে প্রশ্ন তুলে; যাদের কিনা প্রায় দেড় হাজার মৌজা, লক্ষ লক্ষ একর সম্পত্তি। বর্তমান সরকারকে শত শত একর জমি তারা দান করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত টাকা পান নি। অথচ এই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি আবার হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে কথা বলে। তারা এমামুয্যামানকে খ্রিষ্টান আখ্যা দেয়। যারা কিনা এই উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অকল্পনীয় ভূমিকা রেখেছে।

নারীদের উপর আক্রমণের চিত্র তুলে ধরে এর প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্মান্ধ উগ্র ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটাই আজকে হেযবুত তওহীদের মেয়েদের পেছনে লেগেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই পর্যন্ত একশত জায়গায় হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমার মেয়েদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। সবাই জানে হেযবুত তওহীদের নারীরা আমার নেতৃত্বে চলে। আশুলিয়া, সাভার, মিরপুর, কুমিল্লা, গাজীপুর, নীলফামারি ইত্যাদি বহু জায়গায় তাদের উপর হামলা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে যখন আমরা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি তখন তারা আমাদের মুচলেকা দিয়েছে। সরি বলেছে। পা ছুঁয়ে মাফ চেয়েছে। অন্তত বিশটি ঘটনায় তারা মুচলেকা দিয়েছে। শুধু এ বছরই মুচলেকা দিয়েছে চারটি স্থানে। 
আলেমদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সম্মানিত আলেম-ওলামারা আমরা আপনাদেরকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। আমার সারাজীবন আমি দেখেছি, যত আলেম-ওলামা আমাদের বাসায় দাওয়াত নিয়েছেন তাদেরকে আমার বাবা সাধ্যমত আপ্যায়ন করেছেন। তাদেরকে বাসা থেকে বিদায় দেওয়ার সময় সদর দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। কখনো দেখি নাই যে, তিনি আলেমদের সম্মানের ক্ষেত্রে কোন কৃপণতা করেছেন।

তিনি বলেন, যে বিষয়ে কোরআনে নাই, রসুল (সা.) বলেন নাই সেটা আপনারা বললেন, নতুন ফতোয়া বের করলেন। সেই ফতোয়া দিয়ে আপনারা নারীদের ঘরে আটকালেন। আর দোহাই দিলেন নারী বাইরে থাকলে সমাজে ফেতনা সৃষ্টি হবে। আজকে ফেতনার দোহাই দিয়ে আপনারা মেয়েদের ঘরবন্দি করেছেন। তাদেরকে জাতির কল্যাণে, সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন নাই। আজকে যদি ফিলিস্তিনি মেয়েদের সামনে ইসলামের সঠিক শিক্ষা উপস্থাপন করা হত তাহলে তাদের অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হত না। আজ যদি মায়ানমারের লক্ষ লক্ষ মেয়েকে ঐক্যবদ্ধ করে ইসলামের সঠিক আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ করা হত তাহলে তাদের ঘরহারা, ইজ্জতহারা হতে হত না। তারা আজ উদ্বাস্তু হত না। কেউ বলতে পারবে না উম্মতে মোহাম্মদীর কোনো মেয়েকে কোনো কাফের ধরে নিয়ে যেতে পেরেছে। উম্মতে মোহাম্মদীর কোন মেয়েকে অপমান-অপদস্থ করতে পেরেছে। কারণ তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে ইসলামের সঠিক আদর্শ দ্বারা উজ্জীবিত করা হয়েছে। কিন্তু আপনারা কি করলেন, হেযবুত তওহীদের মেয়েরা যখন আমাদের নারীদের সামনে ইসলামের সঠিক আদর্শ তুলে ধরতে গেল, তাদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে মাঠে-ময়দানে নামল তখন আপনারা হেযবুত তওহীদের মেয়েদেরকে ‘খ্রিষ্টান’ অপবাদ দিলেন। জনগণের সামনে প্রচার করলেন তারা বেপর্দা হয়ে চলে, তারা দাইয়ুস নারী ইত্যাদি।

সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে দাবি রেখে তিনি বলেন, আমি আজকের এই নারী সম্মেলনে দাঁড়িয়ে সরকারের কাছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে যে কথাটি বলতে চাই তা হলো, হেযবুত তওহীদ আজ একটি মজলুম সংগঠন। হেযবুত তওহীদ আজ নিপীড়িত নির্যাতিত একটি সংগঠনের নাম। হেযবুত তওহীদের হাজার হাজার নারীরা এখানে তাদের অধিকার খুঁজে পেয়েছে। নোয়াখালীতে আমরা যে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি সেখানে আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে নারীরা কাজ করে। সেখানে স্থানীয় মানুষজন, গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন তারা আমাদের নারীদের কোন চালচলন, আচার আচরণে কোন আপত্তি পেয়েছেন কি না! আমাদের নারীরা ব্যাগ কারখানায় কাজ করে, স্কুলে চাকরি করে, মসজিদ পরিস্কার করে। রসুলাল্লাহর সময় মসজিদের নববীতে মেয়েরা যেসব কাজ করত, আমাদের মসজিদে আমাদের মেয়েরাও সেসব কাজ করে। জুমার দিন আমাদের মসজিদে কখনো কখনো পুরুষদের থেকে নারী মুসল্লির সংখ্যা বেশি হয়ে যায়। এলাকার যত নারী আছে সবাই আসে। এলাকার মানুষজনকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন যে, আমাদের এখানে কখনো একটা মেয়ের ওড়না টানাটানির ঘটনা ঘটেছে কেউ বলতে পারবে না। একটি  শান্তিপূর্ণ সমাজের বাস্তব রূপ আমরা তুলে ধরছি।

ইসলামের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, রসূল (সা.) এর সময়ে নারীদের ভূমিকা পুরুষের পাশাপাশি কোনো অংশে কম নয়। যদিও তাত্ত্বিকভাবে নারীদেরকে বলা হয় সেকেন্ড লাইন। কারণ যুদ্ধের মধ্যে ফ্রন্টে পুরুষরা থাকে। নারীরা দ্বিতীয় সারিতে থেকে যুদ্ধের মধ্যে সৈন্যদের রসদ করে, চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। তাই এটা বলা হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, খালিদ বিন ওয়ালিদের (রা.) ভয়ঙ্কর সেই ইয়ারমুকের যুদ্ধে মেয়েরা দ্বিতীয় লাইনে না থেকে প্রথম সারিতে এসে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তারা সৈন্যদের রক্ষা করেছে। তাহলে মেয়েরা দ্বিতীয় সারিতেও ছিল, প্রথম সারিতেও ছিল। মেয়েরা সংসারও করেছে দীন প্রতিষ্ঠার কাজও করেছে। রসুল (সা.) কে সাহায্যও করেছে আবার রসুলাল্লাহর (সা.) এর মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য মেয়েরা দিকদিগন্তে ছড়িয়েও পড়েছে। মেয়েরাই তাদের স্বামী-সন্তানকে বর্ম পরিয়ে যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়েছে। আবার তাহাজ্জুদের সালাহ করে আল্লাহর কাছে স্বামী-সন্তানদের শাহাদাতের জন্য মোনাজাত করেছে। এই হচ্ছে নারী। নারী প্রেরণা দিবে, উৎসাহ দিবে, উদ্দীপনা দিবে। এটাই চিরন্তন।

সবশেষে তিনি বলেন, কিন্তু নারীদের সেই উৎসাহ, প্রেরণা, উদ্দীপনা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা এই ধর্মব্যবসায়ীদের কারণে চাপা পড়ে গেছে। হেযবুত তওহীদ আবারও সেই চাপা দেয়া সত্যকে উদঘাটন করে মানুষের সামনে তুলে ধরছে। এবার হেযবুত তওহীদের বোনেদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলতে হবে। হেযবুত তওহীদের বোনেরা আজকে যারা আমাদের সামনে এসেছেন আমি আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন এই সমাজ আপনাদেরকে আগাতে দেবে না। এই সমাজ হচ্ছে একটি জালের মত, বেড়ির মত। এরা আপনাকে বের হতে দেবে না। কিন্তু এখন সময় এসেছে এটা এই জাল ছিন্ন করার। এই বেড়ি খুলে ফেলার। তা না হলে সামনের ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। আমরা ময়দানে আছি, ময়দানে থাকব ইনশাল্লাহ।