
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের মহালছড়ি উপজেলার মুড়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত “স্বপ্নবিলাস ফ্লাওয়ার ভিলেজ” একসময় ছিল ইটভাটার পোড়া মাটির স্তুপ। তবে সময়ের পালাবদলে এখন তা রূপ নিয়েছে রঙিন ফুলের রাজ্যে। চারপাশে বাহারি ফুলের সমারোহ, বাতাসে ভেসে বেড়ায় মিষ্টি সৌরভ। স্থানীয়দের কাছে এটি “মহালছড়ি ফুল বাগিচা” নামেও পরিচিত। জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। পর্যটনপ্রেমীদের কাছেও এটি এখন একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
মহালছড়ির প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা এ বাগানে ২৪ ঘণ্টা মিশ্রিত বিশুদ্ধ বাতাস আর নানান জাতের ফুলের গন্ধে চারপাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। বসন্তের নরম হাওয়ায় গাঁদা ফুল সতেজভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। ফুলগুলোতে নানা রঙের প্রজাপতির নাচন আর মৌমাছির গুঞ্জনে প্রকৃতি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। ফুলের সৌরভে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা সারি সারি বাগানের ভেতর ঘুরে বেড়িয়ে মনের আনন্দে ছবি তোলেন।
এ বাগানটির স্বপ্নদ্রষ্টা স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা মো. খালেদ মাসুদ সাগর। আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করলেও কৃষির প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি এ উদ্যোগ নেন। ২০২৪ সালে ২ একর জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথমে দেশি-বিদেশি ১০০ প্রজাতির ফুল নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এক বছরের ব্যবধানে ফুলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ প্রজাতির ৪০০ জাতের ফুলে। বর্তমানে এটি বাণিজ্যিক চাষাবাদের পাশাপাশি আঞ্চলিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
বাগানে প্রবেশ করতে হলে দর্শনার্থীদের মাত্র ৩০ টাকার বিনিময়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। তবে একটি শর্ত মেনে চলতে হয়- ফুল ছেঁড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শর্ত মেনে চলার বিষয়টি দর্শনার্থীদের কাছে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ঘুরতে আসা অনেকেই বলেন, ফুলের রাজ্যে পা দিয়েই মন জুড়িয়ে যায়। টিকিটের মূল্যও বেশ সাশ্রয়ী হওয়ায় পরিবার, বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ঘুরতে আসতে কোনো অসুবিধা হয় না।
স্থানীয় সাংবাদিক শফিক ইসলাম বলেন, “একসময় যেখান দিয়ে চলাচল করা কষ্টকর ছিল, আজ সেখানে ফুলের সৌরভে পথচারীরা হাঁটতে পছন্দ করেন। এটি এলাকার মানুষের মন মানসিকতায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।” স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এটি শুধু আমাদের এলাকার চেহারাই পাল্টে দেয়নি, বরং মানুষকে অবসর কাটানোর এক নতুন স্থান উপহার দিয়েছে।”
উদ্যোক্তা মো. খালেদ মাসুদ সাগর জানান, “খাগড়াছড়ি ও মহালছড়ির আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই ফুল চাষ শুরু করি। আল্লাহর রহমতে আজ এটি বাণিজ্যিক চাষে রূপ নিয়েছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বাগান আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।”
ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থী তানভীর হোসেন বলেন, “এখানে এলে মন হারিয়ে যায়। নানা রঙের ফুল আর শীতল বাতাসের সংমিশ্রণে মনে হয় প্রকৃতির কোলে বসে আছি। শহরের কোলাহল থেকে দূরে এমন জায়গা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।