Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ঈশ্বরগঞ্জে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা ও বাড়ি-দোকান লুট, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যা...

ঈশ্বরগঞ্জে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা ও বাড়ি-দোকান লুট, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

April 27, 2023 10:14:43 PM   স্টাফ রিপোর্টার
ঈশ্বরগঞ্জে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা ও বাড়ি-দোকান লুট, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ী কর্তৃক হেযবুত তওহীদের সদস্যদের হামলা করে ১০ সদস্যকে আহত এবং তাদের বাড়ি-ঘরে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বেলা ১২টায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে হেযবুত তওহীদ।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন হেযবুত তওহীদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সভাপতি এনামুল হক বাপ্পা।
সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেযবুত তওহীদের ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি জানান, এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছিল। কিন্তু ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে একটি চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদী গোষ্ঠী মিথ্যা হ্যান্ডবিল রচনা করে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্তিময় করে তোলার একটি হীনপ্রচেষ্টা শুরু করে। এরা কখনও ইত্তেফাকুল ওলামা পরিষদ, কখনও তওহীদী জনতা, ঈমান আকিদা সংরক্ষণ পরিষদ ইত্যাদি নামে-বেনামে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে আসছিল। এলাকার সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অশান্ত করে তোলার জন্য তারা ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে একটি মিথ্যা হ্যান্ডবিল উচাখোলা বাজারে কিছু শিশু কিশোরদের হাতে দিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। হ্যান্ডবিলটিতে হেযবুত তওহীদের নামে কিছু ধর্মীয় স্পর্শকাতর কথা চালিয়ে দেওয়া হয় যা আদৌ হেযবুত তওহীদের বক্তব্য নয়। উচাখিলা বাজারে বিভিন্ন দোকানপাটের দেওয়ালে হ্যান্ডবিলটি পোস্টার হিসাবে লাগাতে থাকে। এলাকায় এ বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। বিষয়টি গুরুতর বিবেচনায় হেযবুত তওহীদের সদস্যরা দ্রুত ঈশ্বরগঞ্জ থানায় অবগত করে এবং উক্ত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। অভিযুক্তরা হচ্ছে মো. আলী আক্তার মুন্সী (৪৫), আব্দুস সাত্তার পীর (৬৫), মো. মকবুল হোসেন (৩৫) সঙ্গীয় ৩০/৩৫ জন। 
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিনুর রহমানকে বিষয়টির ভয়াবহতা কতদূর যেতে পারে তা বুঝিয়ে বলা হয়। এ ধরনের ষড়যন্ত্র করেই অতীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা করা হয় ও পাঁচজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে বলে আশ্বস্ত করে। কিন্তু ওরা কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে পারে পুলিশ সম্ভবত তা অনুধাবন করতে পারে নি। 
গত ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সাড়ে এগারোটায় দিকে ‘উচাখিলা পরিবার’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে একটি ব্যানার পোস্ট করা হয় যাতে বুধবারে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ মিছিলে যোগদানের জন্য আহ্বান করা হয়। ব্যানারটিতে আয়োজনকারী হিসাবে ‘ইত্তেফাকুল ওলামা, উচাখিলা’ এর নাম উল্লেখ করা হয়। থানায় বিষয়টি অবগত করা হলে থানা থেকে তাদেরকে মিছিল করতে নিষেধ করা হয় না। বলা হয় যে তারা শুধু শান্তিপূর্ণ মিছিল করবে, কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি লিখিত বক্তব্যে হামলার ঘটনা সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে করা হয় বলে দাবি করে বলেন, এর পটভূমি রচনা করা হয় পনেরো দিন আগেই। আর সমাবেশটি ছিল হামলা করার প্রস্তুতিমূলক সমাবেশ। ঘটনার দিন আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে, সংঘবদ্ধ হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে জড় হয়ে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকে এবং লোকদেরকে আক্রমণের জন্য চরমভাবে উত্তেজিত করতে থাকে। একটা পর্যায়ে জিডিতে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে হেযবুত তওহীদ সদস্য হেলালুদ্দিনের বাড়ির দিকে মিছিল নিয়ে যেতে থাকে আর শ্লোগান দিতে থাকে- ‘হেযবুত তওহীদের আস্তানা গুড়িয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’। মিছিলে প্রায় দুই থেকে আড়াইশ’ উগ্রবাদী যোগ দেয়। তারা রাম দা, কিরিচ, রড, লাঠি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে অবস্থানরত হেযবুত তওহীদের নির্দোষ নিরপরাধ নিরস্ত্র ও সদস্যদের উপর নৃশংসভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, দফায় দফায় হামলা চালান হয়। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেও অন্তত দশজন আহত হন। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। তারা সবাই হাসপাতাল ভর্তি। তাদের প্রত্যেকের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। হামলাকারীরা বাড়ি-ঘর, মোটর সাইকেল ভাংচুর করে ও আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এক সদস্যের দোকানেও হামলা করে তারা। তার দোকানের নগদটাকাসহ মালালাম লুট করা হয়।
হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নিরুপায় হয়ে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করলে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স নিয়ে থানার ওসি ঘটনাস্থলে আসেন। 
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হেযবুত তওহীদ আইন মান্যকারী একটি আন্দোল এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা তারা পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসা ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছে। এটা একদিকে আমাদের ঈমানী দায়িত্ব এবং অন্যদিকে দেশের নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের নাগরিক কর্তব্য বলে মনে করি। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, আমাদের মানবাধিকার, আমাদের ধর্মীয় অধিকার। এই গোষ্ঠীটি আজকে হেযবুত তওহীদের নির্দোষ, নিরপরাধ, আইন মান্যকারী সদস্যদের উপর পথে-ঘাটে আক্রমণ চালাচ্ছে, তারা মিথ্যা হ্যান্ডবিল রচনা করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। 
সবশেষে এ বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার আজকে ভূলুণ্ঠিত। আমরা আহত, রক্তাক্ত। অথচ আমাদের বিরুদ্ধেই হামলাকারীরা মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। 
এসময় সাংবাদিকদের সামনে তিনি ৫ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- দ্রুত হামলাকারীদের সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। মিথ্যা হ্যান্ডবিলের রচয়িতাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। লুটপাট করা অর্থ দ্রুত উদ্ধার ও অবিলম্বে ভাংচুর করে ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। উচাখিলার নির্দোষ নিরপরাধ আইন মান্যকারী হেযবুত তওহীদ সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।  সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে যারা হামলার উস্কানি ও অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে আইসিটি অ্যাক্টের আওতায় আনা হবে। 
সংবাদ সম্মেলনে হামলা ও লুটপাটের ঘটনার প্রকৃত বাস্তব চিত্র তুলে ধরে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি এজেডএম নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে মিছিল নিয়ে এসে হেযবুত তওহীদের সদস্য হেলাল উদ্দিন, কবির উদ্দিন, মোতাকাব্বির, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান একেএম মোদাব্বিরুল ইসলামের বসতবাড়িতে হামলা করে করে। তারা রাম দা, কিরিচ, রড, লাঠি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর। এসময় কুপিয়ে বেশ কয়েকজনকে রক্তাক্ত জখম করে। গুরুতর আহত কবির মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া ও সারোয়ার হোসেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এসময় তারা ঘরবাড়ি, বাড়িতে থাকা আসবাবপত্র ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এসময় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহজাহানের দোকানেও হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তাকে মারধর করে নগদ টাকাসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা। এতে নগদ টাকাসহ সর্বমোট ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট করে বলে জানান তিনি। 
নাজমুল ইসলাম বলেন, ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের হুমকি দেওয়ার কারণে সন্ত্রাসীদের হামলার আশংকা করে বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় গত ২৫ এপ্রিল একটি জিডি করি আমি। জিডির পর ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই সন্ত্রাসীরা এই ম্যাচাকার চালায়।  
স্থানীয় লোকজন জানায়, হামলাকারীরা চিহ্নিত পেশাদার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক কারবারি ও ভয়ংকর প্রকৃতির লোক। 
হামলার শিকার ব্যবসায়ী শাহজাহান সাংবাদিকদের জানান, তাঁর দোকানে ক্যাশবাক্সে থাকা নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও সাড়ে তিন লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোজাব্বিরুল ইসলাম বলেন, আমার বাসার সকল ভাড়াটিয়াদের ঘরে থাকা মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যের বাইকটি ভেঙ্গে চুরমার করেছে। হামলাকারীদের তাণ্ডব এর দৃশ্য,  কাণ্ডকারখানা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে রয়েছে। তিনি এ ঘটনায় জড়িত সাবেক মেম্বার হারুন অর রশিদ, যুবলীগ নেতা মাহবুব হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করে এদেরকে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাজারে পুলিশের টহল জোরদার করার দাবি জানান।
এদিকে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবারও হামলার আশংকা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. রহমতুল্লাহ রানা, হেযবুত তওহীদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. আতাউর রহমান, নান্দাইল উপজেলা সভাপতি হাবিবুর রহমান, মানিক মিয়াসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। 
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাছিনুর রহমান রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। উভয়পক্ষ ইট পাটকেল ছোঁড়াছুড়ি করছিল। আমরা তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে এসেছি। তিনি আরো বলেন, এর আগে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে। 
ঘটনা ঘটার আগেই হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে দাখিল করা জিডির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলে এরকম সহিংসতা  এড়ানো যেত কিনা এমন প্রশ্নের জবাব ওসি সাহেব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি।