Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রংপুর / এলজিইডি প্রকৌশলী ছাবিউলের জব্দকৃত ৩৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার নির্দেশ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের...

এলজিইডি প্রকৌশলী ছাবিউলের জব্দকৃত ৩৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার নির্দেশ

March 17, 2025 04:39:13 PM   উপজেলা প্রতিনিধি
এলজিইডি প্রকৌশলী ছাবিউলের জব্দকৃত ৩৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার নির্দেশ

ঠিকাদারদের কাছ থেকে টেন পার্সেন্ট হারে ঘুষ নেওয়ার টাকা নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা সহ এলজিইডি'র গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম আটক হলেও পরে তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে জব্দকৃত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার বিকেলে নাটোরের সিংড়া আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান এ আদেশ দেন।

এর আগে এ ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্তকারী কর্মকর্তা সিংড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ জব্দ করা টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ চেয়ে দুপুরে আদালতে আবেদন করেন।

ছাবিউল ইসলাম ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় যোগ দেন। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১৪ বছরের বেশি সময় তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলজিইডি গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। একই সময়ে সাঘাটায় উপজেলা প্রকৌশলীরও দায়িত্ব পালন করেন। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বরিশালে যোগ দেন। সেখানে মাত্র ২৩ দিন দায়িত্ব পালন করে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর গাইবান্ধায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলি হয়ে আসেন।

সচেতন মহল বলছে, সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে টানা তিন বছরের বেশি থাকতে পারেন না। কিন্তু ছাবিউল ইসলাম এ বিধি উপেক্ষা করে টানা ২০ বছর ধরে একই জেলায় থেকে ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডি'র গাইবান্ধার একাধিক কর্মচারী জানান, ছাবিউল ইসলাম ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়মিত টেন পার্সেন্ট হারে ঘুষ নেন। ঠিকাদাররা বাধ্য হয়েই ঘুষ দেন, কারণ তার চাহিদামতো কমিশন না দিলে কোনো বিল পাশ হয় না।

তারা আরও জানান, সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবস ছাবিউল ইসলাম দিনে ফিল্ড ভিজিট করেন, আর রাত ১২টা পর্যন্ত অফিসে থাকেন। মূলত রাতেই ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করেন। তাদের ভাষায়, "আমরা ছোট চাকরি করি, চোখের সামনে কোটি কোটি টাকার লেনদেন দেখি, কিন্তু কিছুই বলার নেই।"

অফিসের বাইরেও ছাবিউল ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে রিয়াজ নামে এক যুবককে একান্ত সহকারী হিসেবে রেখেছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে পাল্টা প্রশ্ন করেন, "স্যার কি এই বৃহস্পতিবারও বাড়িতে টাকা নিয়ে গেছেন?" এরপর বলেন, "বৃহস্পতিবার এলেই স্যার কিছু না কিছু টাকা নিয়ে যান। আর এ টাকাগুলো তো স্যার একাই খান না। রাজশাহীর নেতা ও ঢাকার হেড অফিসে কিছু পাঠাতে হয়। আমি এটুকুই জানি।"

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার ও এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি ও হেড অফিসের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাবিউল ইসলামের গভীর সখ্যতা রয়েছে। ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও তিনি নিজেই পাথর, বিটুমিন, ইটের খোয়া ও রড ঠিকাদারদের কাছে সরবরাহ করেন এবং বিলের চেক দিয়ে নিজের পাওনা বুঝে নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম ঘুষ গ্রহণ ও নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে গাইবান্ধা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ছাবিউল ইসলামের গাড়ি তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা জব্দ করে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।