
ওবায়দুল হক বাদল:
‘বিশ্বময় মুসলিম নিপীড়ন বন্ধে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নাই’ শীর্ষক জনসভা করেছে হেযবুত তওহীদ। বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর দেড়টায় কুষ্টিয়ায় বিশাল এ জনসভার আয়োজন করে কুষ্টিয়া জেলা হেযবুত তওহীদ। জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, গত কয়েক শতাব্দী ধরে বিশ্বময় চলছে মুসলিমদের উপর নিপীড়ন, যা বর্তমানে চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। একটার পর একটা মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। গাজার মুসলমানদের গণহত্যা বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়েছে। খণ্ড-বিখণ্ড মুসলিম জাতি চেয়ে চেয়ে তা দেখেছে কিন্তু কিছুই করতে পারেনি। যতদিন মুসলিম জাতি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারবে, আল্লাহ নির্দেশিত সীসাগলা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে না পারবে ততদিনে এই নিপীড়ন থেকে রেহাই পাবে না।
দক্ষিণ এশিয়ার উত্তপ্ত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করছি, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠছে। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ চলছে- সীমান্তে সীমান্তে সংঘাত, দখল-আগ্রাসন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।এসব সংঘাতের পেছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা কারণ রয়েছে। পরাশক্তিধর অস্ত্রব্যবসায়ী ও আধিপত্যবাদী ধনী রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও সংকটপূর্ণ করে তুলছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলা, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে রাখাইন অঞ্চলের অস্থিরতা -এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এক ধরনের থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একে অপরকে দোষারোপ করার পাশাপাশি ইসলাম ও মুসলমানদের টার্গেট করে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে এবং গণমাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে ঘৃণাপূর্ণ প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
মুসলমান জাতির আজকের এই দুর্গতির কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুসলমান নামাজ-রোজা ত্যাগ করে নাই, দাড়ি-টুপি ত্যাগ করে নাই, তসবিহ-তাহলিল ত্যাগ করে নাই, মসজিদ নির্মাণ ত্যাগ করে নাই। মুসলমান দীন প্রতিষ্ঠার জেহাদ ত্যাগ করেছে। আল্লাহ বলেছেন, “হে মোমেনগণ! যদি তোমরা আল্লাহর রাস্তায় অভিযানে বের না হও তাহলে তোমাদের কঠিন শাস্তি দেব, তোমাদের উপর অন্য জাতি চাপিয়ে দেব।”
আশঙ্কা প্রকাশ করে হেযবুত তওহীদের এই নেতা বলেন, “বাংলাদেশেও যদি কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের অবস্থাও হয়ত গাজার মুসলমানদের মতো হতে পারে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে ফেরকা-মাজহাব ভুলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে, বিভাজনের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে এক আল্লার হুকুমের উপর ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্বা গড়ে তুলতে হবে।”
মহান মে দিবসে শ্রমিকদের স্মরণ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে জোর করে তাদের থেকে শ্রম আদায় করা তথা দাসত্বপ্রথার ইতিহাস মানব সভ্যতার প্রাচীনতম অন্যায়। এই নির্যাতিত শ্রমজীবী মানুষগুলি তখনই মুক্তি পেয়েছে যখন আল্লাহর কোন নবী-রসুলের দ্বারা ঐ সমাজে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। অতীতকালে শ্রমদানে বাধ্য এই শ্রমিকদেরকে বলা হতো দাস, গোলাম। এখন দাসের বদলে শ্রমিক, কর্মী এবং এমন আরও সুন্দর সুন্দর সুশীল শব্দ ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সুন্দর শব্দের অন্তরালে এখনও সেই ক্রীতদাসের বেদনার্ত অভিব্যক্তিই দেখা যায়। Ñ বলেন ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
জাতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সকলকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি- আপনারা হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে জানুন, আমাদের উদ্দেশ্য ও আদর্শ সম্পর্কে অবগত হোন এবং আমাদের বক্তব্য বিবেচনা করুন। আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িক সংঘাত মোকাবেলায় হেযবুত তওহীদের প্রচেষ্টা অত্যন্ত কার্যকর ও সময়োপযোগী প্রমাণিত হবে।
হেযবুত তওহীদের কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি আক্কাস আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী মো. নিজাম উদ্দীন, কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, খুলনা বিভাগীয় সভাপতি মো. তানভীর আহমেদ, ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, কুষ্টিয়া অঞ্চলের সভাপতি মো. জসেব উদ্দীন, খুলনা অঞ্চলের সভাপতি শামসুজ্জামান মিলন, কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মোতালিব খান, কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, খুলনা বিভাগ নারী বিষয়ক সম্পাদক জেরিন সাইয়ারা, ভেড়ামারা সভাপতি মিজানুর রহমান মজনু প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শুরুর আগেই জনতার ঢল নামে অনুষ্ঠানস্থলে। ‘এক জাতি এক দেশ ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ’, ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো - করতে হবে’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন - জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগানে স্লোগানে মিছিল নিয়ে মানুষ জনসভাস্থলে আসে। আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে-ট্রেনে চেপে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানস্থল এক জনসমুদ্রে রূপ নেয়। স্লোগানে স্লোগানে মুসলমানদের উপর নিপীড়ন বন্ধে এবং দেশ ও মানবতার স্বার্থে তারা ঐক্যবদ্ধ হবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানটির মিডিয়া পার্টনার ছিল ইলদ্রিম মিডিয়া ও দৈনিক দেশেরপত্র।