Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রংপুর / কুড়িগ্রামে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট: ব্যবসায়ী ও পরিবেশকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্য...

কুড়িগ্রামে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট: ব্যবসায়ী ও পরিবেশকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

March 05, 2025 09:41:58 PM   জেলা প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট: ব্যবসায়ী ও পরিবেশকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা:
কুড়িগ্রামের বাজারে আলু, কপি, লেবু, বেগুনসহ বেশকিছু পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। এদিকে, সুপার শপ ও দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুটছে। ব্যবসায়ী এবং পরিবেশকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। অত্যাবশ্যকীয় এই ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ভোক্তারা। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং ভোজ্যপণ্যের সংকটের মুখে পড়েছেন গ্রাহকরা, বিশেষত পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে। তবে সরকারি সংস্থাগুলোর দাবি, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার রমজানে বেশিরভাগ পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে রয়েছে।

এদিকে কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা এবং সংশ্লিষ্ট পরিবেশকরা অভিযোগ করছেন যে, বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তারা বারবার তাগিদ দিলেও বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছেন না, ফলে বাধ্য হয়ে খোলা তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। একদিকে অভিযোগ, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, খোলা তেলের বাজারে লাভ বেশি হওয়ায় তারা বোতলজাত তেল খুলে বিক্রি করছেন।

কুড়িগ্রামে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে বাজার মনিটরিং নিয়ে এক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং বাজার কমিটির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। এ সভায় জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা জানান, যদি বাজারে কোনো ধরনের কারচুপি, অতিরিক্ত মূল্য আদায় অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়, তবে ব্যবসায়ীদের আর্থিক জরিমানা ছাড়াও কারাদণ্ডের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা জেলার সর্বত্র দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। যদি কোথাও অসঙ্গতি দেখা যায়, প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

শহরের সুপার শপ এবং একাধিক বাজারের পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতাদের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, গ্রাহকরা বাধ্য হয়ে খোলা তেল কিনতে হচ্ছে। প্রতি লিটার খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকায়। তবে খোলা তেলে অতৃপ্তি নিয়ে অনেক ক্রেতা ঘরে ফিরছেন। স্থানীয় বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা তাদের কাছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক দোকানী বোতলজাত তেলের সংকটের বিষয়ে অভিযোগ করলেও কোম্পানি প্রতিনিধিরা তাদের সাহায্য করছেন না।

কুড়িগ্রামের আদর্শ পৌর বাজারের ব্যবসায়ী নাঈম ইসলাম বলেন, "অনেক দিন ধরেই কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করছে না। গ্রাহকরা বারবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাবি করলেও দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা খোলা তেল নিয়ে ফিরছেন।" তিনি আরও জানান, কোম্পানিগুলো বোতলজাত তেল দেওয়ার জন্য নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে, যেমন এক কার্টন তেল নিলে এক বস্তা প্যাকেট চাল, আটা অথবা সরিষার তেল নিতে হবে। এসব শর্ত দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়।

কুড়িগ্রাম শহরের কয়েকটি দোকানে খোলা তেল পাওয়া গেলেও, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রায় নেই। বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন, কিছু কোম্পানি যেমন তীর, রূপচাঁদা, ফ্রেশ এবং পুষ্টি, তাদের বিক্রয় প্রতিনিধিরা বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহের সঙ্গে চাল, আটা ও সরিষার তেল নেওয়ার শর্তে তেল দিচ্ছেন। ফলে, গ্রাহকরা বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছেন না। শহরের মুদি দোকানি আয়নাল হক বলেন, “কোম্পানির অন্য পণ্য নেওয়ার শর্ত ছাড়া বোতলজাত সয়াবিন মিলছে না। কোম্পানিগুলো শর্তের জালে দোকানদারদের জিম্মি করছে।”

জিয়া বাজারের আরেক মুদি দোকানি আকরাম হোসেন বলেন, “কয়েকদিন আগে রূপচাঁদা কোম্পানির এসআর এসে এক কার্টন তেলের সঙ্গে এক বস্তা প্যাকেট চাল নেওয়ার শর্ত দিয়ে গেছেন। নিতে পারিনি। বোতলজাত সয়াবিন না থাকলেও খোলা সয়াবিন সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।”

জিয়া বাজারে তেল নিতে আসা গ্রাহক আমিনা বেগম বলেন, “বোতলের সয়াবিন কিনতে আসলাম। কোথাও পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে খোলা তেল কিনলাম।” আরেক গ্রাহক আনিছুর রহমান বলেন, “রমজান মাস আসলেই জনগণের ভোগান্তি বাড়ে। জিনিসের দাম তো বেশি হয়, সঙ্গে সংকটও তৈরি হয়। ইফতারসহ রান্নার কাজে সয়াবিনের ব্যবহার একটু বেশি হয়। সব পরিবারে একই রকম। কিন্তু বোতলের তেল কোথাও নেই। খোলা তেল নিয়ে বাড়ি ফিরছি।”

কুড়িগ্রামে ফ্রেশ সয়াবিন তেলের ডিলার দবির হোসেনের ম্যানেজার পাপ্পু জানান, “কোম্পানি তেল না দিলে আমরা কী করবো। আমরা বারবার তেল চেয়েও পাচ্ছি না। তারা বলছে, তাদের তেলের সরবরাহ কম।”

রূপচাঁদা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সাব্বির বলেন, “আমরা তেল পাওয়ামাত্র মার্কেটে ছাড়ছি। সরবরাহ তুলনামূলক কম হলেও আমরা আটকে রাখছি না। তবে দোকানদারদের খোলা তেল বিক্রির বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উত্তম কুমার রায় বলেন, “বোতলজাত সয়াবিনের সংকটের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। আশা করছি, দ্রুত এর সমাধান হবে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা টিসিবি’র পণ্য পেয়েছি, সেগুলো বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রি শুরু হয়েছে।”