Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রংপুর / চিলাহাটি-সৈয়দপুর রেলপথের ১২ হাজার রেলক্লিপ উধাও - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

চিলাহাটি-সৈয়দপুর রেলপথের ১২ হাজার রেলক্লিপ উধাও

February 17, 2025 07:44:51 PM   দেশজুড়ে ডেস্ক
চিলাহাটি-সৈয়দপুর রেলপথের ১২ হাজার রেলক্লিপ উধাও

নীলফামারী জেলার চিলাহাটি-সৈয়দপুর রেলপথে ব্যাপকভাবে রেলক্লিপের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রেললাইনের স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখার জন্য ব্যবহৃত ইলাসটিক রেলক্লিপ (ইআরসি) প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। স্টেশন সংলগ্ন লুপ লাইনগুলোতেও একই সমস্যা দেখা গেছে। সৈয়দপুর-চিলাহাটির ৬২ কিলোমিটার রেলপথের প্রায় ১২ হাজার ইআরসি ক্লিপ নেই বলে রেলওয়ের হিসাবেই জানা গেছে। তবে স্থানীয় রেলওয়ে কর্মীরা মনে করছেন, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, কিছু ক্লিপ পুরোনো হয়ে ভেঙে গেছে, আর বাকিগুলো চুরি হয়ে গেছে। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, রেলপথের সংস্কার কাজ হলেও ক্লিপগুলো রেললাইনে এখনও লাগানো হয়নি। বর্তমানে, যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনের চলাচল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে ট্রেন চালকেরা জানিয়েছেন।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কাঠ, লোহা অথবা সিমেন্টের স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখতে ইআরসি ক্লিপ ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি স্লিপারের দুই পাশে দুটি ক্লিপ এবং রেললাইনের সংযোগস্থলে চারটি করে ক্লিপ থাকে। সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে বার্মাসেল, ইসলামবাগ, ঘোড়াঘাট, গোলাহাটসহ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক ইআরসি ক্লিপ নেই। এমনকি, এসব জায়গায় ক্লিপগুলোর বড় অংশ অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু এলাকায় ইআরসি ক্লিপ স্থাপন করা হলেও, তা স্থায়ীভাবে আটকানো হয়নি, ফলে রেললাইনগুলো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

সৈয়দপুর রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, সৈয়দপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন, যেখানে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী রুটের বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা এই স্টেশন থেকে যাতায়াত করেন। ২০১২ সালে সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথে নতুন রেললাইন বসানো হয় এবং কিছু লুপ লাইন সম্প্রতি সংস্কার করা হয়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কিলোমিটার রেলপথে প্রায় ১,৪০০ স্লিপার থাকে এবং প্রতিটি স্লিপারের সঙ্গে চারটি করে ক্লিপ লাগানো হয়। এর মানে, পুরো ৬২ কিলোমিটার রেলপথে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪০০ ক্লিপ থাকার কথা ছিল। তবে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার ক্লিপ নেই, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এক টেনচালক বলেন, “ক্লিপ না থাকায় রেললাইন নড়বড়ে হয়ে পড়ে, যে কোনো সময় ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে।”

ইলিয়াস হোসেন নামে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, "নতুন রেললাইন বসানোর পর থেকেই এমন অবস্থা। স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখার জন্য যে ক্লিপ ব্যবহার করা হয়, তা অনেক জায়গায় লাগানো হয়নি। আর এই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে।"

এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধা জানান, নতুন রেললাইনের ওপর স্থাপন করা ক্লিপগুলো চুরি হয়ে গেছে। এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচল করার কারণে বেশ কিছু ক্লিপ ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং যেখানে ক্লিপ নেই, সেখানে দ্রুত ক্লিপ লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে।”

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন নবী জানান, তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন এবং এখনো ক্লিপ চুরির কোনো অভিযোগ তার জানা নেই। তবে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ (পথ) বীরবল মণ্ডল জানান, রেললাইনের ক্লিপ না থাকার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচলের জন্য কোন ঝুঁকি নেই।

এভাবে, চিলাহাটি-সৈয়দপুর রেলপথের ১২ হাজার রেলক্লিপের অনুপস্থিতি রেলপথের নিরাপত্তা এবং যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে।