
বরিশাল সদর প্রতিনিধি:
ছয় দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ফ্লোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ছয় ঘণ্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। তবে এ আন্দোলনের জন্য প্রো-ভিসিসহ তিনজনকে দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, তবে বাকিদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী মোকাবেল শেখ, মোশারেফ হোসেন ও রফিক বলেন, গত শুক্রবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির সভা চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ ও গেট ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়। ওই অভিযোগ প্রত্যাহারে ছয় ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তারা আরও পাঁচটি দাবি উপস্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো- ১. সিন্ডিকেট মেম্বারদের নাম প্রকাশ ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বাদ দিয়ে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা। ২. রেজিস্ট্রারসহ আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অপসারণ। ৩. ছাত্রসংসদ নির্বাচনে শিক্ষকদের নিয়ে কমিটি করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা। ৪. নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাডেমিক ও আইনি শাস্তির আওতায় আনা। ৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণসহ আবাসন সংকট নিরসনের বিষয়টি ১২ ঘণ্টার মধ্যে স্পষ্ট করা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন বলেন, জুলাই আন্দোলনেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। প্রথমে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট কোনো দাবি ছিল না, যে কারণে উপাচার্যের বাসভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। এরপর শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে কথা বলেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে এমন কোনো ইস্যু ছিল না যার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পেছনে তিনজন ব্যক্তি কাজ করছে। যারা চিঠি দিয়ে সিন্ডিকেট সভা বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারাই এ ঘটনার ইন্ধনদাতা। সরকারের নিয়োগ করা লোকেরা এমন কাজ করতে পারেন না, তাদের আইনি বাধা রয়েছে। এরপরও তারা এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো তথ্যই গোপন থাকে না।
উপাচার্য বলেন, আমি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য। যোগদানের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন নিয়ে কাজ করছি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো প্রো-ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি গেস্ট হাউজে থাকছেন, যা অনুমোদিত নয়। তাকে বলা হয়েছে সম্মান রক্ষার্থে বাসা ভাড়া করে থাকতে। ইউজিসি জানতে চেয়েছে, কেন প্রো-ভিসি গেস্ট হাউজে থাকছেন এবং কেন তার জন্য আসবাবপত্র কেনা হবে? তারা কি অতিথি?
তিনি আরও বলেন, প্রো-ভিসি উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া দাফতরিক চিঠি ইস্যু করেছেন, যা তিনি করতে পারেন না। চিঠি ইস্যুর জন্য উপাচার্যের অনুমতি নিতে হয়, কিন্তু তিনি তা মানছেন না। শিক্ষার্থীদের ভুল তথ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন, যা বর্তমান সরকারের আমলে কাঙ্ক্ষিত নয়।
গত শুক্রবার সিন্ডিকেট মিটিং চলাকালে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী স্লোগান দেয় এবং লোহার গেট ভাঙচুর করে। জুলাই আন্দোলনের সময়ও এমন ঘটনা ঘটেনি। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের বিষয়ে সরকার থেকে নির্দেশনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ও সম্মান নষ্ট করা হলে মামলা হবে। তবে অনুশোচনা থাকলে মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট ও শ্রেণিকক্ষের উন্নয়নে তিন কোটি ৯ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। নতুনভাবে মন্ত্রণালয়ে ৫০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষার্থী মাইসা নিহত হওয়ার ঘটনায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে নিরলস কাজ করছি বলে দাবি করেন উপাচার্য।
এ বিষয়ে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানি বলেন, "তিনি যদি অভিযোগ করেন, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও আমাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, অথচ রাষ্ট্রপতি আমাকে আইন অনুযায়ী নিয়োগ দিয়েছেন। একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব থাকা উচিত ছিল আমার, কিন্তু এখনও আমাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।"