
জাবি সংবাদদাতা:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচির অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে 'জাগোনিউজ২৪.কম'-এর জাবি প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে হুমকি প্রদান ও ছাত্রদলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের প্রতি আপত্তিকর শব্দচয়ন করার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা এ কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় সংহতি জানিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয় গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এবং বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র সংসদ ও শিক্ষার্থীরা।
এ সময় অভিযোগ করে তারা বলেন, ভ্যাকসিন কার্যক্রমের কারচুপির নিউজ প্রকাশের জেরে 'জাগোনিউজ২৪.কম'-এর সাংবাদিক সৈকত ইসলামকে হুমকি এবং সাংবাদিকদের নিয়ে ছাত্রদলের আপত্তিকর শব্দচয়ন স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, গত ১৫ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচার মদদপুষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা তাদের কলম চালিয়ে গেছেন। জাগোনিউজে সংবাদ প্রকাশের পর ছাত্রদল যে ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তা স্পষ্টত স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হস্তক্ষেপ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ যে বিবৃতি দিয়েছে তা অন্যান্য ইউনিটগুলোকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আরও উদ্দীপ্ত করবে। তার সংবাদ প্রকাশে কোনো ধরনের ভুল থাকলে লিগ্যাল প্রসিডিউর অনুসরণ করার কথা, কিন্তু এর বদলে তাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়েছে। আপনারা যদি ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীরা রুখে দাঁড়াবে।
জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও বণিক বার্তার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি মেহেদী মামুন বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে যে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য সবার আগে গুলির মুখে বুক পেতে দিয়েছিল জাবির সাংবাদিকরা। এখন সাংবাদিকদের নির্ভয়ে লেখালেখি করার কথা ছিল, অথচ আজ তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। এর থেকে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। ছাত্রদলকে বলতে চাই, আপনাদের দুর্দিনে সাংবাদিকরাই পাশে ছিল, আবার একই পরিস্থিতি ফিরলে হয়তো তাদেরই থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সময়ের আলোর সাংবাদিক সাব্বির আহমেদকে বলতে চাই, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এসে আপনি কীভাবে অন্য একজন পেশাদার সাংবাদিককে হুমকি দিতে পারেন! এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে আগামীতে যদি কোনো সাংবাদিকের ওপর কোনো হুমকি আসে তাহলে আমরা কোনোভাবেই ছাড় দেব না।
গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা আশা করেছিলাম কেউ যদি কোনো ভুল করে তবে তার জন্য ক্ষমা চাইবে, কিন্তু বাস্তবে দেখছি উল্টোটা। আমরা দেখতে পাচ্ছি, জাগোনিউজের জাবি প্রতিনিধি সৈকত ছাত্রদলের ভ্যাকসিন কর্মসূচির দুর্নীতি নিয়ে নিরপেক্ষভাবে একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেছিল। এজন্য ছাত্রদল তো ক্ষমা চায়নি বরং সেই নিউজ করার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও চাপ দেওয়া হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সৈকত একা নয়। আমরা হাজার হাজার সৈকত এখনো বেঁচে আছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে শুধু সৈকত নয়, বরং সকল সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবসময়ই তাদের পাশে আছি।
জাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি ওয়াজহাতুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরেও সাংবাদিকদের জন্য স্বাধীন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। আজও তাদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে সংবাদ লেখার জন্য। সাংবাদিকের লেখার কোনো ভুল থাকলে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিবাদ করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তা না করে পেশিশক্তির মাধ্যমে নিউজ সরিয়ে ফেলতে চাপ প্রয়োগ করেছে এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে যে শব্দ উচ্চারণ করেছে তা খুবই নিন্দনীয়। তাই ছাত্রদল কর্তৃক দ্রুত এরূপ কাজের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিজেদের মধ্যে থাকা অপকর্মগুলোর তদন্ত করা উচিত।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল জাগোনিউজের জাবি প্রতিনিধি সৈকত ইসলাম "আওয়ামী এমপিকে পুনর্বাসন/ভাগ-বাটোয়ারা দ্বন্দ্বে জাবিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিত" শিরোনামে জাগোনিউজে স্বনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করলে তাকে নানাভাবে হুমকি প্রদান ও চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়। ওই দিন সময়ের আলো পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির আহমেদ তাকে উক্ত নিউজের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসিরের সম্পর্ক রয়েছে কি না -এমন প্রসঙ্গ তুলে নানাভাবে জেরা করে এবং এক পর্যায়ে নাসির উদ্দীনের পক্ষে রিট করার হুমকি দেন।